মিল্ক ভিটার ৪ হাজার একর জমি বেহাত!

সংসদ প্রতিবেদক

মিল্ক ভিটার ৪ হাজার একর জমি বেহাত!
ফাইল ছবি

সরকারের মালিকানাধীন দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বরাদ্দ দেয়া পাঁচ হাজার একর গো-চারণ ভূমির ৪ হাজার একরই বেহাত হয়ে গেছে। আর দীর্ঘ সময়েও জমিগুলো উদ্ধারে প্রতিষ্ঠানটির কোনো তৎপরতা না থাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ‘উষ্মা’ প্রকাশ করেছে।

আজ মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়। বৈঠকে মিল্কভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে কমিটি।

universel cardiac hospital

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিল্ক ভিটাকে পাঁচ হাজার একর জমি বরাদ্দ দেন। পাবনা ও সিরাজগঞ্জে বরাদ্দ দেওয়া সেই জমি বেহাত হতে হতে এখন মিল্ক ভিটার হাতে আছে মাত্র এক হাজার একরের মতো জমি।

জানা যায়, বর্তমানে এই দুই জেলার প্রায় সাড়ে ৫০০ সমিতির ২৫ হাজার খামারি মিল্ক ভিটায় দুধ সরবরাহ করেন।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, মিল্ক ভিটার কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন সময়ে অসাধু লোকজন জমি বরাদ্দ দিয়ে দখল করেছে। অনেকক্ষেত্রে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে জমি দখল করেছে। এই জমি উদ্ধারে মিল্ক ভিটা কখনও আইনি লড়াইয়ে যায়নি। কমিটি এই জমি উদ্ধারে মিল্কভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে সীসার উপস্থিতি পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে মিল্ক ভিটার পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের পাস্তুরিত দুধে সহনীয় মাত্রার চেয়ে কম সীসা রয়েছে। এ সময় মিল্ক ভিটা কয়েকটি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে।

আ স ম ফিরোজ বলেন, মিল্ক ভিটার দুধে যেটুকু সীসা পাওয়া গেছে তা পানি থেকে গবাদি পশুর শরীরে গেছে। আমরা এ বিষয়ে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার সুপারিশ করেছি।

সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়, বৈঠকে সঠিক মান বজায় রেখে সীসা, ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিকের মত ক্ষতিকারক উপাদানমুক্ত পণ্য উৎপাদনের সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে মিল্ক ভিটার আয়-ব্যয় ও মুনাফা নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি বার্ষিক দুধ উৎপাদন তিন লাখ লিটারে উন্নীত করার সুপারিশ করে।

কমিটির সভাপতি বলেন, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে মিল্ক ভিটা এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ওইসব সুপারিশ করে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মিল্ক ভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া মিল্ক ভিটার দুর্নীতিবাজ, অদক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই ও বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, গত বছর ‘মিল্ক ভিটার দুরাবস্থা’ ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১৪ দফা সুপারিশ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মিল্ক ভিটা রক্ষায় জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন, গুঁেড়াদুধ আমদানির ওপর সর্বোচ্চ করারোপ, প্রান্তিক-ভূমিহীন ও দরিদ্র খামারিসহ দুগ্ধ শিল্পে জড়িত নারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা, বেদখল হওয়া গো-চারণ ভূমি উদ্ধার, বিশেষ কিছু জমিতে সাধারণ ফসলের বদলে গরুর জন্য মানসম্মত ঘাস চাষ ও গরুর প্রজনন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করা, দুগ্ধ শিল্পে বিদ্যুৎ ব্যবহারে ক্ষুদ্র শিল্পের আওতায় বাণিজ্যিক বিল থেকে রেহাই দেওয়া।

আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ওমর ফারুক চৌধুরী, ইসমাত আরা সাদেক, নারায়ন চন্দ্র চন্দ, মাহবুব উল আলম হানিফ, মির্জা আজম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এবং জিল্লুল হাকিম বৈঠকে অংশ নেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে