রোহিঙ্গাদের স্বভূমিতে ফিরে যাওয়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে তার দেশেরও জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে আছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
ঢাকা সফররত জয়শঙ্কর মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।
ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এ বিষয়ে একমত হয়েছি যে, বাস্তুচ্যুত লোকজনের নিরাপদ, দ্রুত ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন এই অঞ্চলের তিন দেশ-বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিষয়।
‘দারুণ বৈঠক’ হওয়ায় উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, সব বিষয়েই আমরা কম-বেশি মতৈক্যে পৌঁছেছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর সোমবার রাতে প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন জয়শঙ্কর। মঙ্গলবার ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন তিনি।
বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রায় সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নয়া দিল্লি যথাযথ ভূমিকা রাখছে না বলে বাংলাদেশের অনেকে সমালোচনা করে আসছেন। যদিও ২০১৭ সালের অগাস্টে রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ এই সংকট দেখা দেওয়ার পর রাখাইনে ব্যাপক সহায়তামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে নয়া দিল্লি।
প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আলোচনার মধ্যে রাখাইন রাজ্যে এরইমধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় আড়াইশ ঘর তৈরি করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী আগামী ২২ অগাস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার। এর আগে গত নভেম্বরে এই প্রক্রিয়া শুরুর কথা থাকলেও মিয়ানমার তাদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে পারেনি অভিযোগ তুলে তা নাকচ করেন রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশও।
বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই বাস্তুচ্যুতদের আরও সহায়তা প্রদান এবং রাখাইন রাজ্যের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে তাদের প্রস্তুত থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করছেন তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, প্রতিবেশীরা একসঙ্গে কী করতে পারে- তার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই অংশীদারিত্বকে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘রোল মডেল’ হিসেবে ধরে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুই দিনের সফর শেষে বুধবার সকালে ঢাকা ছাড়বেন জয়শঙ্কর।