আমার মেয়ে সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৭) ধর্ষণের পর হত্যা করেন হারুন আর রশিদ। হত্যার কথা স্বীকার করে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। মেয়ে হত্যার বিচারের আশায় আমি প্রতি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হচ্ছি। জানি না কবে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পাব।
আজ রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বারান্দায় কথা হয় রাজধানীর ওয়ারীতে সিলভারডেল স্কুলের নার্সারির ছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মার বাবা আব্দুস সালামের সঙ্গে। আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুস সালাম বলেন, আজ থেকে ৫১ দিন আগে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করেন হারুন আর রশীদ। তিনি হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু আজ দুটি ধার্য তারিখ পার হয়ে গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা মামলার চার্জশিট দিচ্ছেন না।
তিনি বলেন, আসামি গ্রেফতারের পরও চার্জশিট না দেয়ায় আমি হতাশ। আদালত আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন। আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, ওই তারিখের আগে যেন মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়।
এ মামলা তদন্ত করছেন গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) ওয়ারী জোনাল টিমের পরিদর্শক আরজুন। তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) ওয়ারী জোনাল টিমের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) বছির আহম্মেদ গণমাধ্যমকে বলেন, মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আসামির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করব।
তিনি আরও বলেন, এ মামলায় হারুন আর রশিদের নামে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আদালতে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন হারুন।
এদিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আরজুন প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এ জন্য ঢাকা মহানগর হাকিম মাইনুল ইসলাম প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন করে ১৬ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
মামলার একমাত্র আসামি হারুন আর রশিদকে গত ৭ জুলাই তার বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন হারুন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। বর্তমানে তিনি কারাগারে।
আব্দুস সালাম বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সায়মা তার মাকে বলে, আমি উপরে পাশের ফ্ল্যাটে যাচ্ছি, একটু খেলাধুলা করতে। এরপর থেকে নিখোঁজ হয় সায়মা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নবম তলায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে গলায় রশি দিয়ে বাঁধা ও মুখে রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পাই।
এরপর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে সায়মার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের পর তাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ময়নাতদন্তে তার যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন, মুখে রক্ত ও আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁটে কামড়ের দাগ দেখা গেছে।