টানা বিদ্যুৎ সংকটে ভোগা বাংলাদেশ এখন বিদ্যুৎ রপ্তানির পরিকল্পনা করছে। ভারতের কাছে বিক্রির পরিকল্পনা দেশটিকে জানানো হয়েছে এবং এই প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছে দিল্লি।
আজ সোমবার বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ ভারত সহযোগিতা বিষয়ক স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব আহমেদ কায়কাউস সরকারের এই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
সচিব বলেন, দেশে উৎপাদিত চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ভারতে রপ্তানির চিন্তাও করা হচ্ছে। এ পরিকল্পনায় ভারতের আপত্তি না থাকলে প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গ্রীষ্ম মৌসুমে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১২ হাজার মেঘাওয়াটের কিছু বেশি। তবে উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। আর শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে দাঁড়ায় সাত হাজার মেঘাওয়াট।
তখন বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখলেও তাদেরকে কিছু অর্থ দিতে হয়। এই সময়ে ভারতের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির বিষয়ে আগ্রহ আছে ঢাকার।
বৈঠকে ভারতের বিদ্যুৎ সচিব সুভাষ চন্দ্র গার্গি জানান, বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ নিতে সম্ভাব্যতা যাছাই করবে নয়াদিল্লি।
২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। এক দশকে এখন চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদনক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতের চাহিদার কথা চিন্তা করে আরো নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। ছোট কেন্দ্রের বদলে কয়লা বা পরমাণুচালিত বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকেও নজর দিয়েছে সরকার।
পাশাপাশি ভারত থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি করছে সরকার। ২০১৩ সালে এই আমদানি শুরু হয়। বর্তমানে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে দেশটি থেকে।
পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ২২ হাজার ৫৯ মেগাওয়াট। তবে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে গত ২৯ মে ১২ হাজার ৮৯৩ মেগাওয়াট।
তবে সরকারের নজর ভবিষ্যতে। ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনা-২০১৬’ পর্যালোচনা করে ২০৪১ সালে ৭৭ হাজার ২৮৫ মেগাওয়াট চাহিদা ধরে আগাচ্ছে বাংলাদেশ।
মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কয়লা থেকে উৎপাদন হবে ৩৩ ভাগ, এলএনজি ও গ্যাস থেকে উৎপাদন করা হবে ৪৩ ভাগ। বাকি ২৫ ভাগের মধ্যে আমদানি, জ্বালানি তেল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উৎপাদন হবে। এর বাইরে নেপাল ও ভুটানে বিনিয়োগ করে বিদ্যুৎ দেশে আনার পরিকল্পনাও আছে।
এর মধ্যে ত্রিপুরা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আরও ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার যে প্রকল্প ছিল, সেটি নিয়ে আর না আগানোর কথা জানান সিনিয়র সচিব আহমেদ কায়কাউস।
তিনি জানান, এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উত্তরবঙ্গ নিয়ে আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে।
সভায় বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি নিয়েও কথা হয়। আর এই কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষও জানান ভারতীয় বিদ্যুৎ সচিব।