দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লেও কমছে পুঁজিবাজারে। চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরে (জুলাই-জুন) দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
জানা যায়, নিট এফডিআই বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। কিন্তু পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৫০ দশমিক ৭১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর করা সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৪৫০ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে নিট এফডিআই বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এফডিআই বাড়লেও দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে।
চলতি অর্থবছর পুঁজিবাজারে মাত্র ১৭ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা আগের অর্থবছর ছিল ৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ১৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ কম। এ হার ৫০ দশমিক ৭১ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বাজারে ডলারের দাম ধারাবাহিক বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে টাকার মান। ফলে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে এখন আগের দামে ডলার কিনতে পারছেন না। ডলারের দাম আরও বাড়লে লোকসানের পরিমাণও বাড়বে।
এমন শঙ্কায় পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাজার স্থিতিশীল ও ডলারের দাম কমলে বিদেশিরা আবারও পুঁজিবাজারে আসবে- এমন প্রত্যাশা তাদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছর কয়েক দফা ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থবছর শুরুর দিন আন্তঃব্যাংক রেটে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা। এখন ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৮১৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
বছরের ব্যবধানে পয়েন্ট টু পয়েন্টে ঘাটতি কমেছে ২৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১৪ শতাংশ ৭৬ শতাংশ। রফতানিতে আগের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি ও আমদানিতে কম প্রবৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে।
এ সময়ে রফতানি আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ০৯ শতাংশ। আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
আলোচিত সময়ে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে পাঁচ হাজার ৫৪৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
সেই হিসাবে গত অর্থবছর শেষে দেশে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় এক হাজার ৫৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৪ টাকা ধরে) এক লাখ ৩০ হাজার ১৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব ঋণাত্মক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ হার কমেছে। গত অর্থবছরের চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।