জনসংখ্যা ক্রমাগত সঙ্কুচিত হওয়ার মুখে থাকা জাপান যেসব দেশ থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কর্মী নিয়োগ করবে, সেই তালিকায় এবার বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার টোকিওতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তির পর বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি জানানো হয়।
আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৩ লাখ ৩৪ হাজার কর্মী নিয়োগে গত বছরের ডিসেম্বরে জাপানের পার্লামেন্টে বিল পাস হয়।
প্রাথমিকভাবে আটটি দেশ ভিয়েতনাম, চীন, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড ও পূর্ব এশিয়ার অন্য একটি দেশের নাম এই তালিকায় ওঠে। এখন বাংলাদেশও সেই তালিকায় ঢুকল।
এই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিল থেকে কর্মীদের জন্য দুই ধরনের ভিসা ব্যবস্থা চালু করেছে জাপান।
বিদেশি কর্মী যাদের ন্যূনতম কারিগরি শিক্ষা রয়েছে, তারা ৫ বছরের জন্য কাজ করার সুযোগ পাবে। এই সময়ের মধ্যে তারা পরিবারের সদস্যদের জাপানে নিতে পারবে না।
আর যারা দক্ষ (গবেষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী) কর্মী, তারা জাপানে যতদিন খুশি ততদিন থাকতে পারবেন। সেই সাথে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদেরও জাপানে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা শিপলু জামান মঙ্গলবার বলেন, বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের উদ্দেশ্যে জাপানের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাপানের জাতীয় পরিকল্পনা এজেন্সি এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
ওই স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সই করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান; জাপানের পক্ষ থেকে দেশটির বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধীন ইমিগ্রেশন সার্ভিস এজেন্সির কমিশনার সোকো শাসাকি সই করেন।
এ বছরের মে মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের সময় জাপানে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে আলোচনা হয়। তখন জাপান বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিল।
রৌনক জাহান বলেন, জাপানের চাহিদার কথা বিবেচনা করে দক্ষ কর্মী তৈরিতে বিভিন্ন কার্যক্রম ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছি আমরা। আজকের স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বড় আকারে জাপানের শ্রম বাজারে বাংলাদেশ সুযোগ পেল, যা দুই দেশের জন্য লাভজনক হবে।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সারাদেশে ২৬টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে জাপানি ভাষায় ৪ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে।
দূতাবাসের কর্মকর্তা শিপলু জামান বলেন, দুটি ক্যাটাগরিতে আগামী পাঁচ বছর কেয়ার ওয়ার্কার, বিল্ডিং ক্লিনিং ব্যবস্থাপনা, মেশিন পার্টস ইন্ডাস্ট্রিজ, ইলেকট্রিক, ইলেক্ট্রনিক্স, কন্সট্রাকশন, জাহাজ শিল্প, অটোমোবাইল, কৃষিসহ জাপানের ১৪টি খাতে বিশেষভাবে দক্ষ এবং জাপানি ভাষায় পারদর্শী কর্মীদের নিয়োগ দেবে জাপান।
প্রথম ক্যাটাগরিতে জাপানি ভাষার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা থাকলে পরিবার ছাড়া জাপানে পাঁচ বছর পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পাবেন। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে যাদের জাপানি ভাষা ও নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা প্রথম ক্যাটাগরির কর্মীদের চেয়ে বেশি, তারা পরিবারসহ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করার সুযোগ পাবেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, জাপানের পলিসি প্লানিং ডিভিশনের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফায়ারস দপ্তরের পরিচালক ইয়াসুয়াকি ইমাই, বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর এবং দুদেশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় কোটি মানুষ কাজের উদ্দেশ্যে গেলেও জাপানে সরকারিভাবে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ ছিল না। এখন সেই দুয়ার খুলল।
যুগ্ম সচিব জাহাঙ্গীর আলম টোকিও রওনা হওয়ার আগে বলেছিলেন, আমরা জাপানে গিয়ে নিজেরাও সেখানে কেমন জনশক্তির চাহিদা রয়েছে সেগুলো যাচাই করব। জাপান আমাদের থেকে যেমন দক্ষ জনশক্তি চাইবে, আমরা চেষ্টা করব তাদের চাহিদা অনুযায়ী জনশক্তি রপ্তানি করতে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, জাপানে যেতে ইচ্ছুক একজনকে দক্ষ হিসেবে গড়ে উঠতে কমপক্ষে ৮ মাস লাগে। আমি বিশ্বাস করি, জাপান যেই ধরনের দক্ষ লোক চায়, আমরা তাদের সেটা দিতে পারব।
চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কর্মী জাপানে পাঠাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ।