ইইউর ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা পাওয়া নিয়ে সংশয়

বিশেষ প্রতিবেদক

ইইউর ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধা পাওয়া নিয়ে সংশয়
ফাইল ছবি

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলোতে বিদ্যমান জিএসপি (শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা) বাংলাদেশ পাচ্ছে না। এর পরিবর্তে কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে জিএসপি প্লাসের আওতায় সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যে এ সুবিধা পেতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জিএসপি প্লাসের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিদ্যমান যে নীতিমালা রয়েছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে না। তাই ঐ নীতিমালা পরিবর্তন না হলে এ সুবিধা পাবে না।

universel cardiac hospital

জিএসপি সুবিধার আওতায় রপ্তানিকারক দেশগুলো থেকে ইইউর মোট আমদানির মধ্যে একক কোনো দেশের রপ্তানি ১০ শতাংশ অতিক্রম করলে ঐ দেশ জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবে না।

সূত্র জানিয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলো থেকে ইইউভুক্ত দেশগুলোর মোট আমদানির মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আমদানি ১০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। ফলে এ নীতিমালার কারণে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাসের আওতায় শুল্কমুক্ত কিংবা স্বল্প শুল্কের সুবিধা দিতে পারবে না ইউরোপ।

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে অন্যান্য দেশের মতো স্বাভাবিক হারে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। ফলে এ অঞ্চলের বাজারে বাড়তি প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ইউরোপের জিএসপি প্লাস সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে নীতিমালা বর্তমানে রয়েছে, তাতে আমাদের ঐ সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে রপ্তানি ১০ শতাংশ অতিক্রম করলেও আমরা যাতে ঐ সুবিধার আওতায় থাকতে পারি, সেজন্য ঐ নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজন হবে। আমরা তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে ইউরোপের পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। ফলে অস্ত্র বাদে সব পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ইইউভুক্ত ২৭টি দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। আমাদের মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশই যায় এ দেশগুলোতে। এই সুবিধার ফলে সেখানে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রতিযোগী অন্য দেশগুলোর চাইতে অপেক্ষাকৃত বেশি।

তবে ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মধ্যম আয়ের দেশ বা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। এর পরও ইউরোপেরর দেশগুলোতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।

এরপর থেকে ইউরোপের রপ্তানির ক্ষেত্রে ২৭ নীতিমালার শর্ত পরিপালনের সাপেক্ষে জিএসপি প্লাসের আওতায় শুল্কমুক্ত কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে স্বল্প শুল্ক পরিশোধে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সুযোগ থাকবে। এর মধ্যে শ্রম অধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা ও সুশাসন নিশ্চিত করার মতো শর্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে জিএসপি প্লাস সুবিধা নিয়ে দেশে আলোচনা শুরু হয়েছে। অবশ্য রপ্তানিকারকেরা বলছেন, এখনো যে সময় হাতে রয়েছে, তাতে একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ইস্যুটি নিয়ে দ্রুত আলোচনা শুরু করা দরকার, যাতে দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে হলেও বাংলাদেশ এ সুবিধা পায়। অন্যদিকে জিএসপি প্লাসের সুবিধা নিশ্চিত করতে হলেও যেসব শর্ত পরিপালন করতে হবে, তা নিয়েও এখন থেকে কার্যক্রম শুরু করা দরকার।

ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানির মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই গার্মেন্টস পণ্য। ইইউভুক্ত দেশগুলোর গার্মেন্টস পণ্য আমদানির হিসাবরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ইউরোস্ট্যাটের হিসাব অনুযায়ী, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেখানে গার্মেন্টস রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ সবার ওপরে।

ইউরোস্ট্যাটের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে গড় আমদানি শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ হলেও বাংলাদেশ থেকে আমদানি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বাংলাদেশের পর রয়েছে পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে