বিমানবন্দরে এমপিদের নিরাপত্তা তল্লাশিতে ছাড়ের প্রস্তাব নাকচ

সংসদ প্রতিবেদক

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে বিচারপতি, সংসদ সদস্য, ও সাবেক মন্ত্রীদের আলাদা পরিবেশে চেকআপে ‘কিছুটা’ ছাড় দেয়ার প্রস্তাব নাকচ করেছে।

তারা বলেছে, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) আইন ও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে এ ধরনের কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বেবিচকের সহকারি পরিচালক (অর্থবিভাগ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং পরিচালক (পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ সাঈদ হোসাইন মুরাদী স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

এর আগে ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে বিচারপতি, সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীদেরকে আলাদা পরিবেশে চেকআপে ‘কিছুটা’ ছাড় দেয়ার সুপারিশ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সংসদীয় কমিটি।

এমনকি দেশের বিমানবন্দরগুলোতে সংসদ সদস্যসহ ভিআইপিদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা তল্লাশি শিথিল করতে কমিটির অনুরোধ অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে তা অগ্রাহ্য করার আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বেবিচকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাষ্ট্র হওয়ায় বাংলাদেশের সব বিমানবন্দর বিশেষত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে আইসিএও প্রণীত এনেএক্স-১৭ অনুযায়ী প্রিভেন্টিভ সিকিউরিটি মেজার নেয়া বাধ্যতামূলক।

আইসিএওএর আইন অনুযায়ী, প্রতিটি বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশের পূর্বে সিকিউরিটি স্ক্রিনিং করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যা প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র প্রতিপালন করে থাকে।

এ ছাড়া ওই আইনের বিভিন্নধারা অনুযায়ী, বিমানবন্দরে এয়ারসাইডে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিমানের যাত্রী ও কেবিন চেকিং, হোল্ড ব্যাগেজ স্ক্রিনিং কার্গো, মেইল এবং অন্যান্য পণ্যের নিরাপত্তা চেকিং ও বিশেষ ধরনের যাত্রীদের জন্য অনুচ্ছেদ ৪ ও ৭ অনুসরণ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, আইসিএওএর রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের জন্য ন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি প্রোগ্রাম বা এনসিএএসপি প্রণীত হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এনসিএএসপি অনুসরণ করে নিরাপত্তা কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সুনির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশনার অভাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তা চেকিং নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রায়শই বিব্রত হচ্ছেন।

যদিও এনসিএএসপি অনুযায়ী, কেউই নিরাপত্তা চেকিংয়ের আওতামুক্ত নন।

ন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি প্রোগ্রামের নিয়ম অনুযায়ী, নিরাপত্তা তল্লাশি থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার এবং জাতিসংঘের মহাসচিবকে নিরাপত্তা চেকিং থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি ওই আইনের আওতায় জাতির জনকের পরিবারের সদস্যরা, রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্রপতি পরিবারের সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এবং মন্ত্রিপরিষদবিভাগ/স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তা চেকিংয়ের বাইরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ বিষয়ে কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বেবিচক আমাদের আন্তর্জাতিক আইন দেখিয়েছে। বলেছে নিরাপত্তার কথাও। এজন্য সংসদীয় কমিটির সদস্যরা তা মেনে নিয়েছি। নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা তো কিছু বলতে পারি না।

কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

এছাড়াও বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কাজী ফিরোজ রশীদ, তানভীর ইমাম, আশেক উল্লাহ রফিক এবং সৈয়দা রুবিনা আক্তার প্রমুখ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে