সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চায় : ফখরুল

মত ও পথ প্রতিবেদক

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যরা
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যরা। ছবি : সংগৃহিত

সরকার পরিকল্পিতভাবে বেগম জিয়াকে বন্দি করে রেখে এবং লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। এর মধ্যে দিয়ে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। আমরা কি আবারও বাকশালে ফিরে যাব! এত সোজা নয়। কোনো দিনই মেনে নেব না।

আজ সোমবার বিকালে দলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র‌্যালী পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম র‌্যালীকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউন করে বিএনপি। র‌্যালী শুরুর আগে পুরো নয়াপল্টন সড়ক ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে র‌্যালীতে অংশ নেন বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী।

দলীয় ও জাতীয় পতাকা, রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতিসহ নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তারা অংশ নেয়। র‌্যালীতে মশারী টানিয়ে মহানগর দক্ষিণের নেতা-কর্মীরা এসিড মশা প্রতিরোধে জনসচেতনতার বিষয়টিও তুলে ধরে।

ট্রাকের ওপর দলীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে রেকর্ড করা বিভিন্ন সঙ্গীতও বাজতে শুনা যায়। এ ছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের।

সাড়ে ৩টার দিকে র‌্যালী শুরু হলেও নেতাকর্মীরা দুপুর ১২টা থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও এর আশপাশে এসে অবস্থান নিতে থাকে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইল পর্যন্ত কানায় কানায় পূর্ণ হলে সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ীভাবে বানানো মঞ্চ থেকে আগত মিছিলকে অভিনন্দন জানানো হয়। র‌্যালীতে অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের হাতে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই লেখা ব্যানার- ফেস্টুন শোভা পায়।

এ সময় ‘জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব,’ ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে থাকতে দেবো না’ ইত্যাদি স্লোগানে উত্তাল করে তুলেন তারা।

ছাত্রদলের আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের কাউন্সিলকে সামনে রেখে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের শোডাউনও ছিল চোখে পড়ার মতো। র‌্যালীটি নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থেকে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

তবে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হয় যে, নয়াপল্টন থেকে নাইটেঙ্গেল মোড়, কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে যখন র‌্যালীটি পৌঁছে, তখনও শোভাযাত্রার শেষ মাথা নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে অতিক্রম করছিল।

এদিকে র‌্যালীকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে জন্য তৎপর ছিল পুলিশ। নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

র‌্যালী শুরুর আগে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এই সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। প্রায় ২৬ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।। ৫শ’-এর ওপরে নেতাকর্মীকে গুম করেছে।

তিনি বলেন, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নিহত এবং আহত করে এই সরকার ভেবেছে গণতন্ত্র এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন তারা পদদলিত ও দমন করতে পারবে। কিন্তু আজকের এই র‌্যালী প্রমাণ করেছে যে, তারা গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন দমন করতে পারবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যদি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চাই, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই তাহলে আমাদের অবশ্যই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। রাজপথে এসে এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আন্দোলন করতে হবে। আমরা অবশ্যই সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করব, গণতন্ত্রকে মুক্ত করব।

এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন, আমরা একসঙ্গে স্লোগান তুলি, জিয়ার সৈনিক, জিয়া সৈনিক। তার স্লোগানের বিপরীতে নেতাকর্মীরা বলেন, এক হও, এক হও।

তিনি বলেন, মুক্তি চাই মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার-খালেদা জিয়ার। কর্মীরা বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। মির্জা ফখরুল আবারও বলেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক, নিপাত যাক।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে আমাদের মনে রক্তক্ষরণ, অন্যায়ভাবে তারা নেত্রীকে কারাগারে রেখেছে। সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের নেত্রীকে কারাগারে রেখে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে অলিখিত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি বলেন, আজকে সরকারের সব খেলা শেষ। তারা আমাদের দুর্বল করতে চেয়েছিল, আমরা দুর্বল নই। আমরা আগের থেকে আরও শক্তিশালী দল। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া জেল থেকে এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জনগণ আমাদের পেছনে আছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার আর আমাদের স্তব্ধ করে রাখতে পারবে না। অনেকে প্রশ্ন করেন দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলন কখন শুরু হবে? আমি বলতে চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এই আন্দোলন আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এই সরকারের পতন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। আসুন আমরা সরকার পতন আন্দোলনের দিকে যাই। এই সরকার জনগণের নয়, এদের কোনো অধিকার নেই বাংলাদেশের সরকার পরিচালনা করার।

দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও বক্তব্য দেন। র‌্যালীতে আরও অংশ নেন- বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, মশিউর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুল হাই, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শামা ওবায়েদ, মাহবুবে রহমান শামীম, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু,মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আব্দুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল খান, খোন্দকার মাশুকুর রহমান, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, হাসান উদ্দিন সরকার, খন্দকার মারুফ হোসেন, নবী উল্লাহ নবী, আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ, সাদেক খান, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আফরোজা আব্বাস, জেবা খান, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে