রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে দেয়া হাইকোর্টের জামিনের আদেশের কপি বরগুনার আদালতে এসে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে জামিনের আদেশের কপি বরগুনার আদালতে পৌঁছায়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নিম্ন আদালতে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম।
তিনি বলেন, মিন্নিকে দেয়া হাইকোর্টের অন্তবর্তী জামিনের আদেশের স্বাক্ষরিত কপি আজ বেলা ১২টার দিকে বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে পৌঁছেছে। এখন আমরা মিন্নির পক্ষে বেলবন্ড দাখিলের অনুরোধ করব। বিচারক বেলবন্ড গ্রহণ করে কারা কর্তৃপক্ষকে রিলিজ অর্ডার পাঠাবেন। আমরা আশা করছি, সব দাফতরিক কাজ শেষ করে আজকের মধ্যেই মিন্নিকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।
এর আগে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে করা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদনের ওপর সোমবার নো-অর্ডার (কোনো আদেশ নয়) দেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। এর ফলে মিন্নির জামিনে মুক্তিতে বাধা কাটে। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত এ আদেশ দেন।
অন্যদিকে মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আটকাতে ফের আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
রোববার মিন্নির জামিনে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হয়েছেন সুফিয়া খাতুন। সোমবার চেম্বার আদালত সেই আবেদনে নো-অর্ডার দেন।
এর আগে রোববারই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত মিন্নিকে দেয়া জামিনের ৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না- মর্মে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দুই শর্ত দিয়ে মিন্নির অন্তর্বর্তী স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন।
শর্ত দুটি হলো- ১. জামিনে থাকাবস্থায় মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় থাকবেন; ২. জামিনে থাকাবস্থায় তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এই দুই শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে মিন্নির জামিন বাতিল হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।
- আরও পড়ুন, খুলনায় ডেঙ্গু কেড়ে নিল নারীর প্রাণ
প্রসঙ্গত, গত ২৯ আগস্ট মিন্নির জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তবে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মিন্নিকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পর দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পর দিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়।
তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
মিন্নি পরে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। মিন্নির বাবা অভিযোগ করে আসছেন, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি।
বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।