জাতীয় পার্টিতে নানা বিষয়ে প্রকট হয়ে উঠেছে রওশন এরশাদ ও জিএম এরশাদের বিরোধ। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদ নিয়ে সংগঠনটিতে প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দিয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে উল্লেখ করে গত মঙ্গলবার বিকেলে একটি চিঠি দেওয়া হয় স্পিকারকে। এ খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে রওশন এরশাদ গতকাল বুধবার স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন রওশন এরশাদ।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন রওশন এরশাদ। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে দলীয় সূত্রে বলা হয়েছে।
জাপার চেয়ারম্যান পদ নিয়ে রওশন এরশাদ প্রথম প্রশ্ন তোলেন গত ২৩ জুলাই, গণমাধ্যমে দেওয়া এক চিঠির মাধ্যমে। ওই সময় জি এম কাদের এটিকে উড়োচিঠি হিসেবে উল্লেখ করেন। এরপর গত ৩১ আগস্ট এরশাদের চেহলাম অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ছেলে সাদকে নিয়ে রংপুরে যান রওশন এরশাদ। ওই সময় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রওশন বলেন, ‘সম্মেলনেই সিদ্ধান্ত হবে জাপার চেয়ারম্যান কে।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা উল্লেখ করে গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে স্পিকারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলটি চিঠিটি পৌঁছে দেয়। একাদশ জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির ২৫ জন সদস্যের মধ্যে ১৫ জন জি এম কাদেরের পক্ষে আছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ওই চিঠি দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ রওশন গতকাল গুলশানে নিজের বাসায় অনুসারীদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, ফকরুল ইমাম, লিয়াকত হোসেন খোকা ও রওশন আরা মান্নান। পরে বিকেলে তিনি স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দেন। রওশনের ওই চিঠি স্পিকারের দপ্তরে পৌঁছে দেন জাপার সংসদ সদস্য ফকরুল ইমাম। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রওশন আজ বৃহস্পতিবার গুলশানের বাসায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।
স্পিকারকে দেওয়া রওশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, জি এম কাদেরকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে উল্লেখ করে দেওয়া চিঠি বিধিসম্মত হয়নি। তাকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু এ ব্যাপারে বলেন, আমরা এমপিদের নিয়ে বসিনি; দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বসেছিলাম রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মপন্থা ঠিক করতে। সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য নয়।
জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে উল্লেখ করে দেওয়া পত্রের সঙ্গে সম্মতিপত্র দেওয়া ১৫ জন এমপি হলেন—মশিউর রহমান রাঙ্গা, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কাজী ফিরোজ রশিদ, অধ্যাপিকা মাসুদা রশিদ চৌধুরী, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম কিবরিয়া টিপু, নুরুল ইসলাম তালুকদার, সালমা ইসলাম, পনির উদ্দিন আহমেদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, নাজমা আকতার, শরিফুল ইসলাম জিন্না, মেজর (অব.) রানা, মোহাম্মদ সোহেল ও আদেলুর রহমান।