রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাড়ছে চ্যালেঞ্জ

বিশেষ প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা
ফাইল ছবি

রাষ্ট্রহীন মানুষগুলোকে নিয়ে বিপদ বাড়ছেই বাংলাদেশের। প্রথমদিকে অনুকম্পা দেখালেও এখন বিরক্তির দৃষ্টিতে দেখছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরাও। রোহিঙ্গাদের কর্মকাণ্ড জোরালোভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।

দু’বছর গড়িয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের। এ দু’বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি। আলোচনা হয়েছে দ্বি-পাক্ষিক, বহু-পাক্ষিক পরিসরে।

রোহিঙ্গা ইস্যুর অন্যতম অনুঘটক ভারত-চীনকেও পাশে পেতে চেয়েছে বাংলাদেশ। ফলাফল বাংলাদেশের অনুকূলে আসেনি।

রাষ্ট্রহীন মানুষগুলোকে নিয়ে বিপদ বাড়ছেই বাংলাদেশের। প্রথমদিকে অনুকম্পা দেখালেও এখন বিরক্তির দৃষ্টিতে দেখছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরাও। রোহিঙ্গাদের কর্মকাণ্ড জোরালোভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। মোবাইল সেবাও বন্ধ।

তবে এর বিপরীতেও অনেকে অবস্থান নিয়ে বলছেন, তাদের আশ্রয় দেয়ার মধ্য দিয়েই এক মানবিক বাংলাদেশ, মানবিক বাঙালি দেখতে পেল বিশ্ব।

আর সব আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন’-এর বিষয়টি। কবে ফেরত যাবে রোহিঙ্গারা? আদৌ কি ফেরত যাবে? অথবা এ সংকটের ভবিষ্যৎ-বা কী? এমন প্রশ্ন নিয়েই মতামত জানতে চাওয়া হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষক আলতাফ পারেভেজের কাছে।

বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আপাতত হবে না। এটি আমি আগেও বলেছি। রোহিঙ্গারা রাজি থাকলেও প্রত্যাবাসন আপাতত সম্ভব না। কারণ পুরো আরাকান রাজ্যজুড়েই যুদ্ধাবস্থা চলছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলো আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার আর্মির যুদ্ধ চলছে। রোহিঙ্গা আলোচনায় এটি অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

রোহিঙ্গা আর ভারত প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আসলে ভারতের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না। বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র শক্তি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে হাবুডুবু খাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত এবং চীনের সমর্থন দরকার। এ কারণেও হয়তো বাংলাদেশ সরকার কাশ্মীর এবং আসাম ইস্যুতে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে চাইছে না।

রোহিঙ্গাদের সমাবেশ
রোহিঙ্গাদের সমাবেশ। ছবি : সংগৃহিত

অধ্যাপক ড. তানজিম বলেন, আমি প্রথম থেকেই বলেছি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সহজভাবে হবে না। এর আগে রোহিঙ্গারা ফেরত গেছে, তখন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল এবং চীনের ভূমিকা বাংলাদেশের পক্ষে ছিল। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে চীনের তখন ভালো সম্পর্ক ছিল। এখন চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থ ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করতে হয়। ভারতেরও ঠিক তাই। বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র থেকে মিয়ানমার এখন অনেকটাই গণতন্ত্রমুখী। এ কারণে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। মিয়ানমার এক ধরনের আকর্ষণ তৈরি করে ভারত এবং চীনকে পাশে রাখছে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে যতটুকু আন্তর্জাতিকীকরণ করার কথা ছিল, বাংলাদেশ তা সঠিকভাবে করেনি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যর্থ কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে এ বিশ্লেষক বলেন, ব্যর্থ বা সফল তার কোনোটিতেই আমি মত দিচ্ছি না। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সক্রিয়তার অভাব আছে। বাংলাদেশ ব্যর্থ কি-না, তা বলার সময় এখনও আসেনি। বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারত এবং চীনের ভালো সম্পর্ক এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মিয়ানমারে চীন এবং ভারতের স্বার্থ বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণেই মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে তারা। রোহিঙ্গা ইস্যু দ্বিপক্ষীয় বিষয় নয়। বহুপক্ষীয় আলোচনায় এর সমাধান টানতে হবে।

শুধু চাপ নয়, রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য হুমকিও বটে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এ ধরনের জনগোষ্ঠীর জন্য যেমন মানবিক দিক আছে, তেমনি নিজেদের নিরাপত্তার দিকও আছে। রোহিঙ্গারা খুবই বঞ্চিত একটি জনগোষ্ঠী এবং বিপদের মধ্যে থেকেছে দীর্ঘ সময়। তারা নিজেদের স্বার্থে যে কোনো ঝুঁকি নিতে পারে। এ কারণেই বাংলাদেশের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে না পারলে, আমাদের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি হবে। তবে মানবিক ইস্যু হিসেবেই এর সমাধান করতে হবে। কারণ আমাদের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আছে। আমরা জোর করে তাদের বিপদের মুখে ফেলে দিতে পারি না। এ কারণেই সব পথ খোলা রেখেই সমাধান করতে হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে