দুর্নীতিতে পর্দার কাছে হেরে গেছে বালিশ : মির্জা ফখরুল

মত ও পথ প্রতিবেদক

মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রূপপুরের পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ কেনা নিয়ে দুর্নীতিকে ফরিদপুরের ‘পর্দা দুর্নীতি’ হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

ফখরুল বলেন, ৩৭ লাখ টাকা একটা পর্দা। ফরিদপুরে। বালিশ কোথায়, বালিশতো হেরে গেছে। এই হচ্ছে এখন অবস্থা। চতুর্দিকে শুধু লুট।

আজ শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি মহাসচিব।

রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মকর্তাদের জন্য যে ডরমিটরি বানানো হচ্ছে, সেখানে উচ্চমূল্যে আসবাবপত্র এবং তা উঠানোর অস্বাভাবিক খরচ নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। এর মধ্যে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক বিল করার অভিযোগ উঠেছে।

যে প্রতিষ্ঠানটি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে, তারা ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বিল করেছে অভিযোগ করে টাকা আটকে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি যায় হাইকোর্টে। আর তখন জানা যায়, আইসিইউ-এর একটি পর্দার জন্য ৩৭ লাখ টাকা বিল করা হয়েছে।

প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত হলমার্ককে আবার চালু করতে সহযোগিতার উদ্যোগেরও সমালোচনা করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, লুটেরা অর্থনীতিকে আবার লুটেরাদের হাতে দেওয়া হবে। এটাই এদের (সরকার) মূল চরিত্র। এদের চরিত্রই হচ্ছে লুটেরা। চারদিকে সব লুট করছে। এমনভাবে লুট করছে, দেশটা একটা ফোকলা দেশে পরিণত হয়েছে।

আলোচনায় প্রয়াত অর্থনীতিবিদ এম সাইফুর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন ফখরুল। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১১টি বাজেট দেওয়া এই অর্থনীতিবিদ।

ফখরুলের দাবি, দেশের অর্থনীতি এখন ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। সাইফুর রহমানের সময় সামষ্টিক অর্থনীতি সবচেয়ে ভালো। সাইফুর রহমান সাহেব ব্যাংক দেননি। তখন কয়েকটি প্রাইভেট ব্যাংক ছিল। তার ওপর খুব চাপ ছিল, চতুর্দিক থেকে চাপ ছিল যে নতুন ব্যাংক দিতে হবে। এ নিয়ে আমাদের অনেকেই বিক্ষুব্ধ ছিলেন। কিন্তু তিনি (সাইফুর) বলেছিলেন, আমিতো এটাকে একটা লুটেরা অর্থনীতিতে পরিণত করতে পারি না।

তিনি বলেন, সাইফুর রহমান সাহেবরা দেশপ্রেমিক ছিলেন। দেশকে ভালোবাসতেন। সেজন্য নিজেদের লাভবান হওয়ার জন্য বা দলের লোকদের লাভবান করার জন্য দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেননি। এটা খুব বড় কথা তারা দেশ বিক্রি করে দেননি।

স্বাধীনতার পর সাইফুর রহমানের হাত ধরে সম্ভাবনাময় অর্থনীতি তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি নাকি অর্থনীতির আইডল। এটা আদর্শ, মডেল কিন্তু অতিদ্রুত বিশ্বের কাছে প্রমাণিত হয়ে গেছে, এটা একটা ফাঁপা অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। অথচ সাইফুর রহমান, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার সময় এই অর্থনীতি ছিল দৃঢ় অর্থনীতি। তখন ইমার্জিং টাইগার বলা হয়েছিল। তখন ইচ্ছে করলেই পুকুর-চুরি মেগা চুরি করা যেত না। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টে ৩০ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার সুযোগ ছিল না।

সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান প্রমুখ। স্মরণসভাটি পরিচালনা করেন বিএনপি নেতা কাইয়ুম চৌধূরী।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে