মিয়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা নতুন করে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার গভীর রাতে একটি নৌকায় ৬ রোহিঙ্গা টেকনাফের হ্নীলা নয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। তবে বিজিবি তাদের বাধা দেয়।
এর আগেও ২২ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় প্রতিহত করে বিজিবি। তাদের মধ্যে ৪ শিশু ও ৯ নারী, বাকিরা পুরুষ ছিল।
শনিবার সকাল ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ-২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার।
বিজিবি জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে হ্নীলা নয়াপাড়া নাফ নদীর কুতুবদিয়া ঘাট এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালায় ৬ রোহিঙ্গা। এ সময় বিজিবির একটি টহলদল তাদের আটক করে। তাদের মধ্যে ৩ জন নারী ও ৩ জন শিশু ছিল। পরে গভীর রাতে আটক রোহিঙ্গাদের একই সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা ঢুকতে দেওয়া হবে না। রোহিঙ্গা প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশকালে ২৮ রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পাশাপাশি মাদক পাচার ঠেকাতে মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে।
টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান, মিয়ানমারে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গা কষ্টে জীবনযাপন করছে। ফলে রোহিঙ্গারা এখনও বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আগের মত কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, মাঝে মধ্যে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে থাকে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টে কোরবানি ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমার ফেরত যেতে রাজি হয়নি।