বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াতের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। জীবনের ৭৫টি বসন্ত অতিক্রম করে আজ তিনি স্বপ্ন দেখছেন ৭৬ বসন্তের।
একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেতার জন্মদিনে সবার পক্ষ থেকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন প্রিয় অভিনেতা আবুল হায়াত।
আবুল হায়াত বাংলা ১৩৫১ সালের ২৩ ভাদ্র ভারতের মুর্শিদাবাদে মো. আবদুস সালাম ও শামসুন্নাহার বেগমের ঘর আলোকিত করে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেন। মুর্শিদাবাদের সেই আবুল হায়াতই অভিনয় দিয়ে এ দেশের নাট্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন। দেশ-বিদেশে বাংলা ভাষার নাটককে করেছেন সমাদৃত।
নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে আবুল হায়াত বলেন, শুরুতেই আমি আমার বাবা এবং মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। এরপর আমার স্ত্রীর কাছে। কারণ নানা সময় চাকরি নিয়ে, অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ওই সময়টুকুতে সংসার, সন্তানদের আগলে রেখেছে সে। স্ত্রী সন্তানদের আমি সময় দিতে পারিনি, যা দেয়া উচিত ছিল। আমার নাটকের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিও কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ গোলাম মুস্তাফা, সৈয়দ হাসান ইমাম, আবুল খায়ের ও সিরাজুল ইসলামের কাছে, যাদের আমি গুরু বলে মেনে চলি এবং যাদের জীবনাচার্য্য, অভিনয় আমি আদর্শ হিসেবে মেনে এগিয়ে চলি। জন্মদিনে সবার কাছে দোয়া চাই।
তিনি আরও বলেন, অভিনয় জীবনে আমার অভিজ্ঞতা, আমার অর্জন অপ্রথাগতভাবে কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ প্রজন্মের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই।
বরেণ্য এ ব্যক্তিত্বের জন্মদিনটি ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’ ও ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় যৌথভাবে পালন করতে চেয়েছিল। পাশাপাশি এ দিনে তাকে সম্মাননা জানানোর কথাও ছিল। কিন্তু জরুরি কাজে স্ত্রীকে নিয়ে ব্যাংকক গিয়েছেন আবুল হায়াত। তাই এ অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হচ্ছে না বলেই জানা গেছে।
এদিকে বয়সের প্লাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে এ অভিনেতার প্রতি শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাকে নিয়ে সংস্কৃতিসহ দেশের নানা অঙ্গনের ১শ’ বিশিষ্ট ব্যক্তির লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি বই। বইটির নাম ‘সার্থক জনম তোমার হে শিল্পী সুনিপুণ’। বইটিতে আবুল হায়াতকে নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, আতাউর রহমান, আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূর, সুবর্ণা মুস্তাফা, সুলতানা কামাল, আবুল হায়াতের বন্ধু কবি-স্থপতি রবিউল হুসাইন, বিপাশা হায়াত, তৌকীর আহমেদ, শাহেদ শরীফ খান, অপূর্ব, সজল, তিশা, সকাল আহমেদসহ আরও অনেকে। এটি সম্পাদনা করেছেন জিয়াউল হাসান কিসলু।
প্রসঙ্গত, আবুল হায়াত প্রথম মঞ্চ নাটক ‘টিপু সুলতান’-এ অভিনয় করেন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়। ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের হয়ে মঞ্চ তার প্রথম নাটক আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’।
টিভিতে প্রথম অভিনয় করেন জিয়া হায়দারের প্রযোজনায় ‘ইডিপাস’ নাটক। প্রথম বিজ্ঞাপন কিউট টুথপেস্ট। মঞ্চে নির্দেশিত তার প্রথম নাটক ‘আগন্তুক’ এবং টিভিতে ‘হারজিৎ’। প্রথম অভিনীত সিনেমা ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। ১৯৭৪ সালে আলী যাকেরের নির্দেশনায় মঞ্চে ‘বাকী ইতিহাস’ নাটকে অভিনয় করে তিনি ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড ফর ইন্ট্র–ডিউসিং ন্যাচারালিস্টিক অ্যাক্টিং অন বাংলাদেশ স্টেজ’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। এটি বাংলাদেশে দর্শনীর বিনিময়ে প্রথম মঞ্চ নাটক।