ডেডবডি

ইরাজ আহমেদ

ডেডবডি
অলঙ্করণ : বিপ্লব সরকার

জায়গাটা ভালো না। আশপাশের মানুষ বলাবলি করে। ইট বিছানো রাস্তা এসে মুখ থুবড়ে পড়েছে একটা ডোবার মতো জায়গায়। ডোবার তলায় ঘোলা পানি, দু’দিকে কয়েক সারি ঘর। ভাঙা তোবড়ানো টিন, নীল রঙের পলিথিন আর সিমেন্টের বস্তা দিয়ে তৈরি করা মানুষের ঘরবাড়ি। ঘরের ভেতরে নকল স্ট্ক্রু, নুডলস আর সেমাই তৈরির কারখানা। কয়েকটা ঘরে চোলাইয়ের দোকান আর জুয়ার আসর। সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কয়েকটা চা-সিগারেটের দোকান। এসব করেই মানুষগুলো ভাত জোটায়। এই বস্তির ছোট ছেলেরা সকালবেলা কাঁধে চটের বস্তা নিয়ে বের হয়। সারাদিন এদিক-ওদিক ঘুরে, ময়লা ঘেঁটে লোহার টুকরো, ছোট কৌটা কুড়িয়ে আনে। জমা দেয় ফজলুর গাড়ি সারাইয়ের গ্যারেজে। ফজলু বস্তা মেপে কেজিতে তিরিশ টাকা করে ধরিয়ে দেয়। এই লোহা আর কৌটার গাহেক আছে। তারা আবার রাত ছাড়া আসে না। বাচ্চার দল সব জানে। বোমার মসলায় লোহা লাগে। ফজলু লোহা বেচে।

ডোবার ধার ঘেঁষে জোড়া তালগাছ। দুটোই বাজ পড়ে পুড়ে গেছে। কালো হয়ে যাওয়া গুঁড়ি, ন্যাড়া মাথা। রাতের বেলা দূর থেকে দেখলে মনে হবে, এক জোড়া ভূত গলাগলি করে দাঁড়িয়ে আছে। কবে গাছ দুটোর মাথায় বাজ পড়েছিল, কেউ বলতে পারে না।

universel cardiac hospital

হয়তো এখানে মানুষের বসতি হওয়ার আগে এক দুর্যোগের রাতে আকাশ থেকে নেমে এসেছিল আগুনের রেখা। আর তাতেই জোড়া গাছের জান খালাস।

তালগাছের গোড়ায় পড়ে থাকে রাজ্যের ময়লা, মরা কুকুর, ভাঙা টিন, ব্যবহূত কনডম। পুরো এলাকার বাতাস পচা গন্ধে ভারি হয়ে থাকে। এই ময়লার টাল থেকে একটু দূরে সকালে ছোট্ট একটা বাজার বসে। ডোবা পার হয়ে আরও ভেতরের এলাকা থেকে লোকজন শাকসবজি আর মাছ নিয়ে এসে বসে। ব্রিক সলিং রাস্তার উল্টো দিকে বেশ বড় কলোনি এলাকা। তার পর বড় রাস্তা। কলোনির মানুষ শাক আর ছোট মাছের লোভে এদিকে আসে বাজার করতে। এই এলাকা থেকে মেয়েরা কলোনিতে কাজ করতে যায়। তারাও সবজি আর মাছ কিনে নিয়ে যায় মালিকদের জন্য।

যেদিন ঘটনাটা ঘটল, তার আগের রাতে বৃষ্টি ছিল। দুপুর থেকেই আকাশের কলের লাইন কেউ যেন খুলে দিয়েছিল। বৃষ্টি পড়ার বিরাম নেই। বস্তির সামনের নিচু জায়গায় পানি জমে পুকুর। লোকজন খুব একটা বের হয়নি। যারা সকালে বের হয়েছিল, তারাও ফিরেছে তাড়াতাড়ি। শুধু ফজলুর গ্যারেজ আর নাইড়া বাবুর জুয়ার আড্ডায় নিয়মিত কাস্টমার ঢুকে পড়েছিল বৃষ্টি মাথায় করে। বাকি সব সুনসান। ঢাকা শহরে কয়েক দিন ধরে রাজনৈতিক ঝামেলা চলছে। এখানে-ওখানে বোমা ফাটছে, মানুষ মরছে, বাস পোড়ানো হচ্ছে। আর এসব ঘটনা যখন ঘটতে থাকে, ফজলুর গ্যারেজে লোহা কেনার কাস্টমারও বেড়ে যায়।

সকালে আবার বৃষ্টি উধাও। তবে আকাশে মেঘ ছিল। পোড়া তালগাছের গোড়ায় জমা ময়লা সারারাতের বৃষ্টিতে ভিজে আরও টক গন্ধ ছড়াচ্ছিল। প্রথমে বস্তির লোকজনের চোখে পড়েনি। ময়লার স্তূপের কাছে তো কেউ খুব একটা যায় না। করপোরেশনের গাড়ি এসে ময়লা ফেলে আবার তুলে নিয়ে যায়। সেই গাড়ি আসতে আসতে দুপুর হয়ে যায়। সকালে লোহা কুড়ানো দলের মোবারক বের হয়েছিল ঘর থেকে। হিসু করতে গিয়েছিল তালগাছের দিকে। তখনই তার চোখে পড়ে মোটু-পাতলুর পুতুল। হাওয়া ফুরিয়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া। মোটু-পাতলুর কার্টুন মোবারক খুব মন দিয়ে দেখে হারুন কাকার চায়ের দোকানের ছোট্ট টিভিতে। ময়লা ডিঙিয়ে ঠেঁড়া পুতুলটা আনতে গিয়েই মোবারক দেখে ফেলে মানুষটাকে। ভাঙা ইটগুলো যেখানে উঁচু করে সাজানো, তার আড়ালে পড়ে আছে একজন মানুষ। এক পায়ে স্যান্ডেল, অন্য পা খালি। মোবারক মোটুর পুতুলটা হাতে নিয়ে কয়েক পা সামনে এগিয়ে গিয়েছিল ঘটনাটা বোঝার জন্য। লোকটা উপুড় হয়ে পড়ে আছে। একটা হাত শরীরের তলায় চাপা পড়া। এ পর্যন্ত দেখে লাফিয়ে সরে আসে মোবারক। এক দৌড়ে বস্তিতে গিয়ে খবরটা জানায়। মুহূর্তে ভিড় জমে যায় তালগাছের গোড়ায়। অসংখ্য মাছির সঙ্গে অনেক মানুষের ভিড়।

দুই.

টেবিলের ওপর রাখা ওয়াকিটকিটা খড়খড় শব্দ করে ওঠে। থানার সেকেন্ড অফিসার রিয়াজুল হক বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায় একবার। শালা, সকালবেলাই শুরু হয়ে গেল। কাল রাতে বৃষ্টির মধ্যেও দুই চোখের পাতা এক করতে পারেনি রিয়াজুল। গত পনেরো দিন ধরে ঢাকা শহরে যা ঘটছে, তাতে ঘুম বাড়িছাড়া। রাতে অঝোর বৃষ্টির মধ্যেও তিনটা গাড়িতে আগুন দিয়েছে শালারা। অ্যাকশনে চারজন আহত, তার মধ্যে আবার একজন পুলিশ কনস্টেবল। অন্ধকারে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে মাথায় ইট খেয়ে চিৎপাত। সবচেয়ে বড় ঝামেলার কথা হচ্ছে, লোকটার রাইফেলটাও ছোটাছুটির মধ্যে খোয়া গেছে। পুরো এলাকা আগুন হয়ে আছে। সার্চ পার্টি এখনও অপারেশন চালাচ্ছে রাইফেল উদ্ধার করার জন্য।

রিয়াজুল থানায় ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। সুযোগ পেলে এক কাপ চা খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল মনের মধ্যে। মাথাটা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে। ভেতরে তীব্র ব্যথা বেলুনের মতো ফুলছে, আবার চুপসে যাচ্ছে। ওয়াকিটকি আওয়াজ করেই যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে রিয়াজুল যন্ত্রটা হাতে নিয়ে বোতাম টেপে। যান্ত্রিক গলায় কথা বলে কন্ট্রোল। ডোবার পাড় এলাকায় একটা বেওয়ারিশ বডি পড়ে আছে। এখনই রেসকিউ করতে হবে। ওয়াকিটকিতে মুখস্থ কয়েকটা কথা বলে যন্ত্রটা ঠকাস করে টেবিলে রাখে রিয়াজুল। চা আর খাওয়া হবে না। বিড়বিড় করে খিস্তি করে। এত ঝামেলার মধ্যে ডেডবডি! ডোবার পাড় জায়গাটাই ক্রিমিনাল এলাকা। বস্তির ভেতরে কয়েকজন দেশি মদ, জুয়ার আড্ডা চালায়। বেশ কয়েকজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ওই এলাকায় আসা-যাওয়া করে, সে খবরও পুলিশের কাছে আছে। কে কাকে খালাস করল, এখন সেটাই দেখার বিষয়। টেবিলের ওপর রাখা হেলমেটটা তুলে নিয়ে রিয়াজুল বের হয়ে যায় থানা থেকে।

ওসি সাহেবের ফোন আসে ডোবার পাড়ে পৌঁছানোর আগে। সিটে বসে ঝিম ধরে যাচ্ছিল। ওসির ফোনে খাড়া হয়ে বসে রিয়াজুল।

‘রিয়াজুল, কোথায় তুমি?’

‘স্যার, আমি ডোবার পাড়ে যাচ্ছি। একটা ডেডবডি…।’

‘আমি জানি। খবরটা তোমার আমাকে আগেই জানানো উচিত ছিল।’

ওসির গলা গম্ভীর শোনায়। রিয়াজুল থতমত খায়।

‘স্যার… স্যার, আমি ভাবলাম আপনি সারারাত অপারেশনে ছিলেন, টায়ার্ড হয়ে রেস্ট করছেন, তাই…।’

‘আজকাল তুমি একটু বেশি ভাবো। অ্যানি ওয়ে, ওপর থেকে ফোন এসেছিল। তুমি দ্রুত গিয়ে বডিটার ব্যবস্থা করো। এখনও মিডিয়া পৌঁছায়নি স্পটে। তার আগে লাশ তুলে থানায় চলে আসবে। বেশি ভাবতে গিয়ে আবার ঝামেলা করে ফেলো না। চারদিকের সিচুয়েশন বেশ খারাপ। মনে রাখবে, কাজটা করতে হবে সাংবাদিকরা যাবার আগে।’

‘জি স্যার, আমি কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। কাজ শেষ করে ফোন দিচ্ছি।’

লাইন কেটে যায়। খবরটা আগে না দেওয়ায় স্যার বেশ বিলা হয়েছে মনে হচ্ছে। ভাবে রিয়াজুল। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে যায়। একদিকে ডিউটি করতে করতে জীবন শেষ, অন্যদিকে স্যারের জটিলতা। এসব ভাবতে ভাবতে রিয়াজুলের মাথায় দ্বিতীয় চিন্তাটা ঢুকে পড়ে। বডিটা মিডিয়ার সামনে এক্সপোজ করতে চাইছে না কেন অথরিটি? পলিটিক্যাল ঘাপলার গন্ধ পায় রিয়াজুল। বড় কোনো মাছ খালাস হলো! সে রকম কিছু হলে তো আওয়াজ পাওয়ার কথা!

চিন্তাগুলো মাথার ভেতরে জোড়া দিতে দিতে ড্রাইভারকে জোরে চালাতে বলে রিয়াজুল। মিডিয়ার লোকজন খবর পেলে বাতাসের আগে উড়ে চলে আসবে। এরা পৌঁছানোর আগে কাজ শেষ করতে হবে।

তিন.

অফিসরুমে অস্থির ভঙ্গিতে পায়চারি করছে তারেক নজিবুল্লাহ। তাকাচ্ছে ফোনের দিকে ঘনঘন। নাহ, স্বপনের এসএমএসটা আসেনি। কপালে গভীর ভাঁজ পড়ে নজিবুল্লাহর। এই ছেলেগুলো কোনো একটা কাজ যদি তাড়াতাড়ি করতে পারে। সেই কখন বলা হয়েছে স্বপনকে, এখনও কোনো খবর নেই। চেয়ারে বসে নজিবুল্লাহ। বুকের মাঝখানে একটা চাপ-ধরা ব্যথা ফিল করছে সকাল থেকে। গ্যাসের পেইন। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, তার পর আবার সকালে উঠে এ রকম একটা খবর। শাওনকে রাত থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনটাও অফ। অথচ এই গাণ্ডুগুলো তাকে খবরটা জানিয়েছে সকালে। কাল বিকেলেও শাওনের সঙ্গে দেখা হয়েছে তার। সরকারি দলের জনসভা ছিল। কাল অনেক দিন পরে মঞ্চে ডাক পড়েছিল বক্তৃতা করতে। মাঠ গরম করার কাজ। শাওন মঞ্চে উঠে সালাম দিয়ে গেছে। বিরোধী দল গত পনেরো দিন ধরে মাঠে তুলকালাম খেলা দেখাচ্ছে। হরতাল, গুলি, বোমা ফাটানো, ভাংচুর- একেবারে ক্যারাব্যারা অবস্থা। প্রথম দিকে সরকার বেশ বিপাকে পড়ে গিয়েছিল। ওরা এতটা জোরদার অ্যাকশনে চলে যাবে, আগেভাগে বোঝা যায়নি। ছাত্রদের মিছিলে গুলির ইস্যুটা বেশ ভালোই কাজে লাগিয়েছে। পরিস্থিতি গরম হলেই তখন তারেক নাজিবুল্লাহদের ডাক পড়ে। শুরু হয় রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধের খেলা। এ রকম সময়ে শাওনের নিউজটায় বেশ ঘাবড়ে গেছে নজিবুল্লাহ। সকালে খবর পেয়ে পরিচিত সব জায়গায় খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কোথাও নেই ছেলেটা। আর শাওন ঠিক কিছু না বলে হুট করে গায়েব হওয়ার ছেলে নয়। শাওনকে না পেয়ে প্রথমেই মাথায় আসে খালাস হয়ে যাওয়ার চিন্তাটা। দেশে যা পরিস্থিতি চলছে, তাতে আশঙ্কাটা খুব বেশি অমূলক নয় বলেই মনে হয়েছে নজিবুল্লাহর। আর তখন থেকেই মাথার ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। শাওনের কিছু হয়ে গেলে একদম পথে বসে যাবে নজিবুল্লাহ। এই শহরে রাজনীতি আর ব্যবসা করে খেতে হলে শাওনকে ছাড়া তার চলে না। এই ছেলেকে বিরোধী দলের লোকজন যেমন ভয় পায়, তেমনি তার দলের ভেতরেও অনেকে সমঝে চলে। শাওনের মাসল পাওয়ার ক্যাশ করিয়ে নজিবুল্লাহর আরও কিছুদূর যাওয়ার প্ল্যান আছে। এ রকম অবস্থায় শাওন গায়েব হলে তার চলবে?

হাতের ফোনটা ভাইব্রেট করে। নজিবুল্লাহ চমকে তাকায় আলো জ্বলা স্ট্ক্রিনের দিকে। স্বপন জানাচ্ছে, পুরান ঢাকায় কাল রাতে ঢোকেনি শাওন। এসএমএস দেখে বুকের ভেতরে ধুঁকপুকানিটা বেড়ে যায়। পোলাটা ডুব দিল কোথাও? টেনশনে মাথা কাজ করতে চায় না নজিবুল্লাহর। আগামীকাল বিরোধী দল হরতাল ডেকেছে টানা আটচল্লিশ ঘণ্টা। ওপর থেকে নির্দেশ আছে, এখনই শক্তি প্রয়োগ করতে হবে, যাতে ওরা নামতে না পারে রাস্তায়। নজিবুল্লাহর অস্থির আঙুল নিজের ক্লিনশেভ গালের ওপর ঘোরাঘুরি করে। পুলিশ কমিশনারকে জানানো যেতে পারে বিষয়টা। কিন্তু ওদের জানানো মানে আবার অন্য বিপদ টেনে আনা। অনেক দূর গড়াবে খবর। আর তাতে অন্যরা চান্স নেবে। রব্বানী আর রকিবরা তো বসেই আছে তাকে সাইজ করার জন্য। গা ঝাড়া দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় নজিবুল্লাহ। না, বিষয়টা নিয়ে এভাবে বসে থাকলে চলবে না। তাকেই মাঠে নামতে হবে। প্রথম যাওয়া দরকার পার্টি অফিসে। নজিবুল্লাহ তার ভারী শরীরটা চেয়ার থেকে টেনে তুলে দ্রুত বের হয়ে যায় অফিস থেকে।

চার.

বডিটাকে ঘিরে ভিড় আর কমছে না। পুরনো মুখের সঙ্গে নতুন নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে। সবার মধ্যেই ভয় আর কৌতূহল। জানা কথা, একটু পরেই পুলিশ আসবে। পেছন পেছন সাংবাদিক। তাই অনেকে উঁকি দিয়েই চলে যাচ্ছে। এখানে থাকলেই তো ঝামেলা। কীভাবে মরল, কারা মারল, রাতে গুলির আওয়াজ অথবা চিৎকার শোনা গিয়েছিল কি-না- অনেক প্রশ্নের মিছিল। জায়গাটা তো ভালো না। এলাকার লোকজন নিজস্ব নিয়মে জানে, এ রকম হলে স্পটে বেশিক্ষণ থাকতে নেই। এ রকম লাশ পড়ে থাকা অবশ্য ডোবার পাড়ে নতুন কিছু নয়। গত বছরও ডোবায় একটা লাশ পাওয়া গিয়েছিল। সেটার মাথা ছিল না। সে সময় পুলিশ বস্তি থেকে অনেক মানুষকে ধরে চালান করেছিল থানায়।

পড়ে থাকা এই ছেলেটার অবশ্য বয়স বেশি না। পরনের সাদা শার্টটা পিঠের কাছে রক্তে লাল হয়ে আছে। গুলি করা হয়েছে। মাথাও ফাটা। লাশটা একনজর দেখে গ্যারেজের সামনে এসে দাঁড়ায় ফজলু। তার এখানে যারা আসে, তাদের কেউ না। অবশ্য উপুড় হয়ে পড়ে থাকায় মুখ ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। এখানে সবার মধ্যে তারই ভয় সবচেয়ে বেশি। পুলিশের নজর আছে তার গ্যারেজের ওপর, সেটা ফজলু জানে। অবশ্য খবর পেয়েই গ্যারেজে রাখা বস্তাভর্তি লোহা সরিয়ে ফেলেছে। ফজলুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে নাইড়া বাবু। চাপা গলায় বলে, মালটা কে, চিনতে পারলা?

ফজলু মাথা নেড়ে বলে, না, আমাগো দিকের কেউ না। খালাস কইরা ফালাইয়া গেছে।

শব্দ করে থুথু ফেলে বাবু। ফালাইয়া তো পেঁচগিতে ফালাইলো আমাগো। এহন কয়দিন হালা কাম বন্ধ। লৌড়ের উপরে থাকতে হইব।

ফজলু কানের পেছনে গুঁজে রাখা সিগারেট বের করে ধরায়। চোখ রাখে রাস্তার দিকে।

বাবু চাপা গলায় বলে, আইচ্ছা, ঘটনা কী হইতাছে কও তো? চাইর দিকে হালায় খালি বোম পড়তাছে, মানুষ মরতাছে, বিরোধী দল হরতাল-মরতাল দিয়া একাকার! এহন আবার এহানে লাশ পড়ল… আমার তো আর ভালো লাগতাছে না।

ফজলু তাকায় বাবুর দিকে। বস্তির ভেতরে পোলাটা দুইটা জুয়ার আড্ডা চালায়। হানিফ মিয়ার ঘর ভাড়া, পুলিশের চান্দা আর ক্যাচাল সামাল দিয়া সামান্য কিছু হাতে থাকে বাবুর। শহর জুইড়া হরতাল আর মাইরপিটে বাবুর কাস্টমার আসা কইমা গেছে। তার ওপরে যদি এলাকার সামনে লাশ পইড়া থাকে, তাইলে কাম ফাইনাল। বাবু এহন ট্যাকার চিন্তায় অস্থির। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাবুর দিকে তাকিয়ে হাসে ফজলু। বাবুর কাঁধে হাত রেখে বলে, খেলাটা বুঝস নাই? দুই পাট্টি খেলতে নামছে। আর গোল খাইতাছি আমরা। টেনশন কি আমারও কম? পুলিশ আইসা তো পয়লা আমারে লৌড়াইব। ভাবতাছি, গ্যারেজ বন্ধ কইরা কয়দিন ফুইটা থাকুম।

বাবু ফজলুর হাত থেকে সিগারেট নিয়ে টান দিয়ে বলে, আমারেও নিয়া যাও। গতবারের কথা মনে নাই? চাইর দিন হাজতে আছিলাম।

ফজলু বাবুর কথায় আবার হেসে বলে, তাইলে আর খাড়াইয়া আছস ক্যান? আয় জাইগা।

কথাটা বলে ফজলু হাঁটতে শুরু করে। বাবু যায় তার পেছন পেছন।

পাঁচ.

‘ওই মোবারক, আমারে একটু নিয়া যা বাপ। ময়না কইয়া গেল, ডোবার কাছে বলে মানুষের লাশ পইড়া আছে। আমি একটু দেখতাম।’

ঘরের দরজায় বসে বুড়ি বলে ভেতরে অদৃশ্য মোবারকের উদ্দেশে। সকালে লাশটা দেখার পর থেকে মোবারক ঘরে ঢুকে বসে আছে। সঙ্গীরা পুলিশের কথা বলে গেছে। মোবারক, তরে কিন্তু পুলিশে ধরব। তুই ফার্স্টে লাশটা দেখছস। ভয় পেয়েছে মোবারক। পুলিশকে তার অনেক ভয়। ধরলেই মারে। দাদি সেই সকাল থেইকা বইলা যাইতাছে, তারে লাশ দেখাইতে নিয়া যাইতে। মেজাজ খারাপ হয় মোবারকের। বুড়ির মনে হয় ঈদ লাগছে। লাশ দেখতে যাইব!

আবার দাদির গলা শোনা যায়।

‘ওই মোবারক, কই যে কথা শুনছ না? আমারে একটু নিয়া গেলে কী হয়! আইচ্ছা পোলাটার মুখে কেউ পানি দিছে জানস?’

মেজাজ আরও খারাপ হয় মোবারকের।

‘ব্যাডা কবে মইরা ভূত হইছে আর তুমি আছ মুখে পানি দেওয়া নিয়া।’

‘কী যে কস না তুই! মরণের সময় মুখে পানি দেওন ফরজ। যুদ্ধের বছর এই রকম কত মানুষেরে পানি খাওয়াইছি।’

‘লোকটা যদি হিন্দু হয়, তাইলে?’

‘পানি খাওয়ানোর লগে আবার হিন্দু-মুসলমানের কী? মরণের আগে সবতের মুখে পানি দিতে হয়। পানির কোনো ধর্ম নাই।’

বুড়ি আরও কী যেন বলে। মোবারক শোনে না। তার মনের মধ্যে ভয়ের বেলুনটা বড় হতে থাকে। সে ঘরের কোনায় রাখা ছোট টিনের মুখ খুলে লাট্টু আর কয়েকটা মার্বেল বের করে পকেটে ভরে। তার মাথায় পালানোর চিন্তাটা ফাইনাল হয়ে গেছে। আর যা-ই হোক, পুলিশের হাতে ধরা পড়তে চায় না মোবারক। দরজায় বসে থাকা দাদিকে টপকে বের হয়ে যায় মোবারক। পেছন থেকে বুড়ি বলে, ওই পোলা, এহন আবার কই যাস! আমারে নিয়া যাবি না?

মোবারক দাদির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চলে যায়। বুড়ি কিছুক্ষণ উধাও হয়ে যাওয়া মোবারকের উদ্দেশে গালাগাল করে। তার পর নিজেই উঠে দাঁড়ায় কষ্ট করে। বিড়বিড় করে বলে, নিয়া গেলি না হারামজাদা। মনে করছস, আমি যাইতে পারুম না? আমি নিজেই যামু।

বুড়ি হাঁটতে শুরু করে ডোবাটার উদ্দেশে।

ডোবার পাড়ে ততক্ষণে রিয়াজুলের গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের গাড়ি দেখে ভিড় করে থাকা লোকজন কেটে পড়েছে। রিয়াজুল চারজন কনস্টেবল দাঁড় করিয়ে দিয়ে বডিটা একবার পর্যবেক্ষণ করে। অপরিচিত চেহারা। রিয়াজুলের ধারণা ছিল, কোনো ভিআইপি সন্ত্রাসীর ডেডবডি দেখতে পাবে। এখন তো কত রকমে এসব লোক খতম হচ্ছে। মনে মনে বেশ হতাশ হয় রিয়াজুল। কিন্তু সেই প্রশ্নটা মনের ভেতরে খচখচ করতেই থাকে, তাহলে কেসটা কী? হঠাৎ করে এই মালের বডি ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে কেন?

ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ওসি সাহেবের মুখটা ভেসে উঠতেই তৎপর হয়ে ওঠে রিয়াজুল। আগে বডিটা চালান করতে হবে, তার পর রাউন্ডআপ। কিছু লোককে ধরে দেখাতে না পারলে সাংবাদিকরা ঝাঁপিয়ে পড়বে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লোককে হাতের ইশারায় ডাকে রিয়াজুল। দ্রুত একটা মাদুর বা চাটাইয়ের ব্যবস্থা করতে বলে। লোকটা নির্দেশ পেয়ে ভয়ে ভয়ে বস্তির দিকে ছোটে।

ছয়.

খবরটা পার্টি অফিসে বসেই পেল নজিবুল্লাহ। স্বপন ফোনে জানাল, রোডস অ্যান্ড হাইওয়েজের অফিসে রব্বানীর লোকজন হামলা করেছে। তার গ্রুপের দু’জন গুলিবিদ্ধ। মনে মনে এই ভয়টাই পাচ্ছিল নজিবুল্লাহ। শাওনের গায়েব হয়ে যাওয়ার খবরটা ছড়িয়ে পড়লে রব্বানী আর রকিবের গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠবে। গত তিন বছর শাওন নামের এই তলোয়ারকে ডানে-বামে সমানতালে ব্যবহার করেছে। কাউকে কোনো একটা কাজে আঙুল ছোঁয়াতে দেয়নি নজিবুল্লাহ। টেন্ডার, কনস্ট্রাকশন, দোকান বরাদ্দ- সব জায়গায় শাওন-আতঙ্ক তৈরি করেছে। এসব নিয়ে পার্টির ওপর লেভেলে অনেক সালিশও হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। শাওনকে পার্টির দরকার। তাহলে কি এদের কেউ শাওনকে খালাস করে দিয়েছে। তার পর পুরো ঝামেলা তার কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হবে? পার্টি অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে তারেক নজিবুল্লাহ। ভেতরে ভেতরে তাহলে গেম চলছিল, কিছুই বোঝা যায়নি! মাথার ভেতরে চিন্তার কারখানা চালু হয়ে যায় নজিবুল্লাহর। এবার কি তাহলে তাকে সাইজ করার অনুমতি পেয়েছে রব্বানী? সেও আরেক চিন্তার কথা। আবার এমনও হতে পারে, বিরোধী দলের কাজ। শাওন ওদের দীর্ঘদিনের এক সমস্যার নাম। কিন্তু শাওন কেন কিছুই টের পেল না! এত কাঁচা ছেলে তো সে না।

অনেক কিছু একসঙ্গে ভাবতে ভাবতে নজিবুল্লাহ নিচে নেমে আসে। নিচের বড় হলরুমে পার্টির ছেলেপেলে বসে আছে। কেউ গেটের কাছে জটলা করছে। তাকে দেখে অনেকে সরে গিয়ে সালাম দেয়। গাড়িতে ওঠার আগে ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল আলমের সঙ্গে দেখা হয় নজিবুল্লাহর। আলম সাহেব তাকে একপাশে টেনে নিয়ে যায়।

‘একটা খবর শুনলাম তারেক?’

‘কোথায় শুনলেন?’

হাসে নূরুল আলম।

‘এসব খবর বাতাসের আগে ছড়ায় ব্রাদার। ভালো করে খোঁজ নাও, শাওন আমাদের স্ট্রং ক্যাডার। ওপরে আলোচনা হচ্ছে। কিছু একটা ঘটলে কিন্তু কেউ দায়িত্ব নেবে না। সন্ত্রাসী খতমের খাতায় নাম চলে যাবে।’

মাথার ভেতরে চিন্তার কারখানায় বিপদ সংকেত শুনতে পায় নজিবুল্লাহ।

‘কী আলোচনা হচ্ছে ভাই?’

‘কী ঘটনা, কারা ঘটাল… বিরোধী দলের কারবার হতে পারে। তুমি খোঁজ নিয়ে দেখো, সিচুয়েশন তো ভালো না।’

চিন্তার ছায়া পড়ে নজিবুল্লাহর মুখে। মাথা নেড়ে গাড়িতে ওঠে। গাড়ি চলতে শুরু করতেই স্বপনের ফোন আসে। স্বপন জানায়, ডোবার পাড় এলাকায় সকালবেলা একটা বডি পাওয়া গেছে। পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। পুলিশ পৌঁছে গেছে স্পটে।

এবার সত্যি সত্যি ভয় পায় নজিবুল্লাহ। আর কোনো সন্দেহ নেই, শাওন খালাস। রব্বানী খেলা শুরু করে দিয়েছে। এটা বিরোধী দলের কাজ নয়। স্বপনকে ফোনে রব্বানীদের ওপর পাল্টা হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়ে ড্রাইভারকে অফিসে যেতে বলে নজিবুল্লাহ। ওরা খেলা শুরু করে দিয়েছে। এখন তাকেও পাল্টা গোল করতে হবে।

সাত.

বুড়িকে নিয়ে ঝামেলায় পড়ে রিয়াজুল। বডিটা চাটাই দিয়ে ঢেকে গাড়িতে তোলার আগে কোত্থেকে বুড়ি ভিড় ভেদ করে ঢুকে পড়ে ভেতরে। বুড়ি এই ছেলের মুখ দেখবে, মুখে পানি দেবে। রিয়াজুল বোঝাতে চেষ্টা করে, ছেলেটা অনেক আগেই মারা গেছে, তাকে পানি খাওয়ানোর কিছু নেই। কার কথা কে শোনে? বুড়ির এককথা, বাবা, আমার ছেলে মুক্তিযুদ্ধে মারা গেছে। লাশটাও দেখি নাই। মরার সময় কেউ মুখে পানি দিছিল কি-না, কইতে পারি না। এই পোলা কার পুত, কার নাতি কে জানে! একটু পানি খাওয়াইতে দ্যাও বাবা।

বুড়ি পানি না খাইয়ে লাশ নিতে দেবে না। বলে, মরার মুখেও পানি দিতে হয়। ঝামেলায় পড়ে রিয়াজুলের মেজাজ আরও গরম হয়। এর মধ্যে ওসি স্যারের ফোন আসে। রিয়াজুল সতর্ক হয়ে ফোন ধরে।

‘স্যার, লাশ গাড়িতে তোলা হয়েছে। থানায় আসছি।’

রিয়াজুলের কথা শুনে রীতিমতো হৈ হৈ করে ওঠে ওসি।

‘মাথা খারাপ তোমার? থানায় বডি আনার কোনো দরকার নেই। সোজা মর্গে নিয়ে যাবে। আমি বাড়তি ফোর্স পাঠাচ্ছি। কেসটা সম্ভবত সরকারি দলের। গভর্নমেন্ট পার্টির লোকজন যাচ্ছে হাসপাতালে। মিছিল হবে লাশ নিয়ে। আমার কথা পরিস্কার বুঝতে পেরেছ?’

রিয়াজুল একরাশ বিস্ময়ের মধ্যে ডুবে যায় তার বসের কথা শুনে। ফোন কেটে বুড়িকে ঠেলে সরায় রিয়াজুল। বুড়ি তাকে গালাগাল করে।

‘তোরা সব হইলি শয়তান, জালিম। কার পুত, কার বাপ মইরা গেল- পানিটা খাওয়াইতে দিলি না। আরে লাশের অনেক নিয়ম আছে। তরা কী বুঝবি এইসব? আমার পোলা মরছে আমি জানি।’

অন্য পুলিশরা লাশটা ধরাধরি করে শুইয়ে দেয় ভ্যানের মেঝেতে। রিয়াজুল বুড়ির দিকে তাকিয়ে হাসে।

‘দাদি, চিন্তা কইরো না। একটু পরে এই পোলারে নিয়া মিছিল হবে। পানি খাওয়ানোর অনেক লোক থাকবে।

কথাটা বলে গাড়িতে লাফিয়ে ওঠে রিয়াজুল। পেছনে অনেকটা ধোঁয়া ছেড়ে রওনা হয় পুলিশভ্যান।

আট.

হাসপাতালের গেটে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর নজিবুল্লাহ ফোন পায়। সেক্রেটারি জেনারেল ক্ষেপে আগুন হয়ে ফোন করেছে।

‘নজিব, তোমার লোকজন এসব কী শুরু করেছে, বলবে আমাকে?’

প্রশ্নটা শুনে নজিবুল্লাহর মাথায় চড়াৎ করে রাগ উঠে যায়। ক্ষিপ্ত হয়ে কথা বলে নজিবুল্লাহ।

‘ভাই, বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করেন। সকাল থেকে শাওন নিখোঁজ। ছেলেপেলে আমার কন্ট্রোলে নেই।’

সেক্রেটারির গলা আরও এক পর্দা ওপরে ওঠে।

‘না জেনে ফালতু কথা বলবে না। ওটা শাওনের বডি না। আনআইডেন্টিফাইড কেউ। আমরা রব্বানীকে বলেছি, লাশটা হাসপাতাল থেকে নিয়ে মিছিল বের করতে। বিরোধী দলের ওপর প্রেশার দিতে হবে। ওরা আমাদের লোক মেরে ফেলছে। আর মাঝখানে তুমি তোমার লোক দিয়ে ওদের মিছিলে হামলা চালালে! দিস ইজ টু মাচ নজিব। এ জন্য তোমাকে বহিস্কার করে হতে পারে জানো?’

কথাটা শুনে থমকে যায় নজিবুল্লাহ।

‘ভাই… আমার কাছে খবর আছে…’

‘ভুল খবর আছে তোমার কাছে। রাবিশ। তুমি এখনই আমার সঙ্গে দেখা করো। তোমার ছেলেদের সরে যেতে বলো।’

কথা শেষ করে সেক্রেটারি জেনারেল ফোন কেটে দেন।

ফোনটা টেবিলের ওপর রেখে তারেক নজিবুল্লাহ ধপ করে বসে পড়ে চেয়ারে। রব্বানীর পুরো খেলাটা স্পষ্ট হয়ে যায় তার কাছে। শালা, সুন্দর একটা ফাঁদ বানিয়ে তাকে ঠেলে দিয়েছে ঠিক ফাঁদের মাঝখানে। তাহলে শাওন গেল কোথায়? ভাবনাগুলো নজিবুল্লাহর মাথার ভেতরে জট পাকিয়ে যেতে থাকে।

ঘণ্টাখানেক পরে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে রিয়াজুল। ওয়াকিটকিতে তার কাছে মেসেজ আসে, হাসপাতাল থেকে উইথড্র হতে। বাইরে সরকারি দলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। আপাতত ওটা থামাতে হবে। লাশ পাহারা দেওয়ার আর প্রয়োজন নেই। বিড়বিড় করে নিজের ভাগ্যকে গালাগাল করতে করতে রিয়াজুল গাড়িতে ওঠে।

নয়.

বডিটা পড়ে থাকে মর্গের বারান্দায়। চাটাই দিয়ে মোড়ানো। পা বের হয়ে আছে। এক পায়ে স্যান্ডেল আছে, অন্য পা খালি। বুড়ো আঙুলের মাথায় কোত্থেকে উড়ে এসে বসে একটা নীল রঙের মোটা মাছি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে