আজ মঙ্গলবার ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। মুসলিম বিশ্বের কাছে দিনটি শোক ও বেদনার। আরবিতে ‘আশারা’ মানে ১০। এ কারণে দিনটি আশুরা নামে পরিচিত। ৬১ হিজরির এই দিনে ফোরাত নদীতীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র এবং হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতেমা (রা.)-এর পুত্র ইমাম হোসাইন (রা.)। এ ঘটনা স্মরণ করে বিশ্ব মুসলিম যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে।
বাংলাদেশেও আজ যথাযোগ্য মর্যাদা ও কর্মসূচিতে পবিত্র আশুরা পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে আজ।
কারবালার শোকাবহ দিন স্মরণে পৃথক বাণী দিয়েছেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আজ হোসেনি দালানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাজিয়া মিছিল বের হবে। মিছিলটি ধানমণ্ডি লেকে এসে শেষ হওয়ার কথা। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচার হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়েছে বিশেষ নিবন্ধ।
মুসলমানদের কাছে ১০ মহররম নানা কারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ৬১ হিজরিতে পঞ্চম খলিফা হজরত মুয়াবিয়া (রা.) হজরত মুগির (রা.)-এর পরামর্শে পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। ইসলামী শরিয়ায় বংশানুক্রমিক শাসন বা রাজতন্ত্র হারাম। তাই ইয়াজিদের কাছে বাইয়াত নিতে অস্বীকৃতি জানান ইমাম হোসাইন (রা.)।
এর প্রতিবাদে তিনি মদিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। মক্কা থেকে তিনি কুফার উদ্দেশে হিজরত করেন। পথিমধ্যে কারবালায় থামে তার কাফেলা। ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গীদের আটক করে মদিনায় ফিরিয়ে নিতে উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে। সিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদিও কারবালায় সৈন্য সমাবেশ ঘটায়।
আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শিবির অবরোধ করে। তারা পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। শিবিরের নারী-শিশুসহ সবাই তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েন। কিন্তু ইমাম হোসাইন (রা.) আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানান। অবরোধ অব্যাহত থাকলে ১০ মহররম ইয়াজিদ বাহিনীর অবরোধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইমাম হোসাইন (রা.)।
অসম যুদ্ধে ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তার ৭২ সঙ্গী শাহাদাতবরণ করেন। সিমার ইবনে জিলজুশান ইমাম হোসাইনের (রা.) কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে হত্যা করে। কারবালার বেদনাদায়ক ইতিহাস ছাড়াও দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, এদিনেই আল্লাহতায়ালা আকাশ ও মাটি সৃষ্টি করেন। কেয়ামত হবে এদিনেই। ১০ মহররম পৃথিবীতে হজরত আদম (আ.) আগমন করেন। নবী মুসা (আ.)-এর শত্রু ফেরাউনকে নিল নদে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। নুহ (আ.)-এর নৌকা ঝড় থেকে রক্ষা পায়। দাউদ (আ.)-এর তাওবা কবুল হয়। আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেন। ঈসা (আ.)-কে ঊর্ধ্বাকাশে আল্লাহর নির্দেশে এদিনেই উঠিয়ে নেওয়া হয়। কারবালার শোকের দিনের অনেক আগেই মহানবী (সা.) জীবদ্দশায় আশুরার দিন রোজা রাখতেন।
আবু হুরায়রা (রা.) হাদিসে বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুলকে ১০ মহররম রোজা পালন করতে দেখেছি। আর বলতে শুনেছি, রমজানের রোজা ছাড়া অন্য যে কোনো সময়ের রোজার চেয়ে উত্তম মহররমের রোজা।’
তাই আশুরার দিনে সুন্নি মুসলমানরা রোজা রাখেন। শিয়া সম্প্রদায় মার্সিয়া ও মাতমের মাধ্যমে এই দিন অতিবাহিত করে। আশুরা উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও পুরান ঢাকার হোসেনি দালান এলাকায় বর্ণাঢ্য তাজিয়া মিছিল হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, কড়া নিরাপত্তা থাকবে তাজিয়া মিছিলে। ছুরি-চাকু বহনও নিষেধ। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ শিয়া অধ্যুষিত এলাকায় তাজিয়ার প্রস্তুতি চলছে।