পুলিশ কেন টার্গেট

ফাইল ছবি

সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীর তিনটি স্থানে বোমার বিস্ফোরণ ও দুটি স্থানে পুলিশ বক্সের কাছ থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হয়, পুলিশকে হতাহত করার লক্ষ্য নিয়েই বোমাগুলো রাখা হয়েছিল। ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে জানা যায়, আইএসআই এসব ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ ও আইএসআইয়ের দায় স্বীকারের পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা হয়, ঘটনাগুলো জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাই পরিকল্পিতভাবে ঘটাচ্ছে। বোমাগুলো তত শক্তিমাত্রার না হলেও  ওগুলো দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা সম্ভব।

যে প্রশ্নটি ঘুরেফিরে সবাই করে, তাহলো—পুলিশ কেন টার্গেট। এর উত্তরও সহজ। পুলিশের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা। মনোবল দুর্বল করা। কারণ—পুলিশই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অভিযান চালায়, গ্রেপ্তার করে। সম্প্রতি সংঘটিত বোমার বিস্ফোরণগুলো মারাত্মক না হলেও এ হামলাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এ ঘটনার মাধ্যমে জঙ্গিরা মেসেজ দিতে চাইছে যে তারা নিচিহ্ন হয়ে যায়নি। তারা আছে এবং সক্রিয় আছে। এ জন্য ছোট ঘটনাগুলো ছোট বা তুচ্ছ না ভেবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় আনতে হবে।

অস্তিত্ব সংকটে থাকা জঙ্গিরা পুনঃ সংগঠিত হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সমর্থক ও অনুসারীদের চাঙ্গা করে হয়তো নতুনভাবে তৎপর হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অত্যন্ত তৎপর থাকতে হবে। ঢাকা মহানগরীতে যে চারটি ঘটনা ঘটেছে, তার সব কটিতেই একই পদ্ধতিতে করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় একই ব্যক্তি বা গ্রুপ এ কাজগুলো করেছে। যেকোনো প্রকারেই হোক, এসব হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। গ্রেপ্তার করতে না পারলে এসব সন্ত্রাসীর সাহস বেড়ে যাবে এবং আরো ঘটনা ঘটাবে। বড় কোনো নাশকতামূলক ঘটনাও তারা ঘটাতে পারে। মনে রাখতে হবে, যে রাজনৈতিক শক্তির ছত্রচ্ছায়ায়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল, সেই অপশক্তি এখনো দেশে আছে। 

একই সঙ্গে পুলিশি কার্যক্রমের পাশাপাশি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সবাইকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। ব্যাপক গণসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। আলেম-উলামা, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পেশাজীবী সংগঠন, রাজনীতিবিদ—সবাইকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। নতুন করে যাতে জঙ্গি সৃষ্টি না হয়, তার জন্য মাধ্যমে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা তথা সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে কাজ করতে হবে।

০২.

ভাষা সৈনিক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবীণ সাংবাদিক, লেখক, গবেষক মুহম্মদ মুসা গত ৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। মুহম্মদ মুসার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হলো।

মুহম্মদ মুসা ছিলেন প্রচার বিমুখ কিন্তু সৃষ্টিশীল ও প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ। প্রান্তিক জনপদে তাঁর মতো মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। তবে এ কথা সত্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ তাকে আজীবন মনে রাখবে। তাঁর লেখা ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিবৃত্ত’ বইটি জেলার ইতিহাস ও গুণীজনের পরিচিতিতে আঁকরগ্রন্থ হিসেবে সব সময় বিবেচিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তাঁর সৃষ্টিশীলতা, চিন্তা ও কর্মময় জীবনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে