যাত্রীরা বোয়িং কোম্পানির নির্মিত অত্যাধুনিক ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাচ্ছেন। উড়োজাহাজে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক যাত্রী কয়েক মিনিটের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য যাত্রী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে চার্জ দিতে হয়।
আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী এই মূল্য ১০০ মেগাবাইটের জন্য ৮ ডলার, ৩০০ মেগাবাইটের ১৬ ডলার, আর ৬০০ মেগাবাইটের জন্য ৩২ ডলার হারে চার্জ দিতে হয় যাত্রীদের।
বাংলাদেশের আকাশপথে শুধুমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চারটি ড্রিমলাইনার এয়ারক্র্যাফটে ইন্টারনেট সুবিধা বিদ্যমান।
তবে নিকট ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স তাদের এয়ারক্র্যাফটগুলোতে ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে চায়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল গণমাধ্যমকে বলেন, আপাতত বিমানের চারটি ড্রিমলাইনারে ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন এয়ারক্র্যাফটের অর্ডার দেওয়া হলে সেগুলো তো ইন্টারনেটের সুবিধাসহ আধুনিক সব রকমের সুবিধাদি থাকবে।
তিনি জানান, এজন্য ২৫টি স্যাটেলাইটের সঙ্গে করা হয়েছে চুক্তি। বিমানটি যে স্থানের ওপর দিয়েই যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রিডি ম্যাপ। একইসঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
এদিকে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ তাদের এয়ারক্র্যাফটগুলোতে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আগামী দুই তিন মাসের মধ্যেই রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কমপক্ষে পাঁচটি এয়ারক্র্যাফটের ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিজেন্ট এয়ারওয়েজের চিফ অপারেশন অফিসার (সিওও) আশিশ রায় চৌধুরী।
তিনি জানান, আকাশ পরিবহনে সর্বোত্তম সেবা দানে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই এয়ারলাইন্সে প্রতিনিয়ত ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বাড়ানো হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে গ্রাহকসেবার মানও। সেই সঙ্গে যুগের চাহিদা বিবেচনায় ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিতের বিষয়ে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ পদক্ষেপ নিয়েছে। আশা করছি আগামী দু-তিন মাসের মধ্যেই বেশিরভাগ এয়ারক্র্যাফটে ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। কয়েক মাস ধরে এ বিষয়ে সমীক্ষা চলছে।
দেশের শীর্ষ বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এয়ারক্র্যাফটের ইন্টারনেটের সুবিধা প্রদান করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। যাত্রীরা এই সুবিধা নিশ্চিতের জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছেন। যাত্রীদের অনুরোধ ও চাহিদা বিবেচনায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স অচিরেই বহরে থাকা সবকয়টি এয়ারক্র্যাফট এর ইন্টারনেট সুবিধা প্রধানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, এই সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ এয়ারক্র্যাফট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে। সহসা এই উদ্যোগ সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি আরও বলেন, এই সুবিধা নিশ্চিত করা হলে এবং যাত্রীর সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে বসেই তিনি কথা বলতে পারবেন। উড্ডয়নের পর আকাশে বসেই কল করতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ উড়োজাহাজের ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা গেলে পাল্টে যাবে আকাশ সেবার চিত্র।
এ বিষয়ে আকাশপথ ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক পরিচালনা পর্ষদ সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এয়ারক্র্যাফটে কেবল আরামের ভ্রমণই নয়, ইন্টারনেট, টেলিফোন, টেলিভিশন দেখার সুযোগসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির উড়োজাহাজ যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সে। দেশের অ্যাভিয়েশনের জন্য এটি একটি ভালো দিক।
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার বিষয় মানুষের হাতে এখন সময়। যে কারণে এয়ারক্র্যাফটে বসে অযথা সময় নষ্ট না করে ইন্টারনেটে দাফতরিক কাজকর্ম অনেকেই সারতে চান। বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোতে এ ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হলে নিকট ভবিষ্যতে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যেমন যাত্রী পাবে তেমনি যাত্রীরাও পাবেন উত্তম মানের যাত্রীসেবা।