ভারত দখলীকৃত কাশ্মীর পরিস্থিতি ‘এক্সিডেন্টাল যুদ্ধে’র (আকস্মিক যুদ্ধ) ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে বলে সতর্ক করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। এমন অবস্থায় তিনি সংঘাতপূর্ণ ওই অঞ্চল সফর করতে আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেলে ব্যাচেলেটকে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে জেনেভায় অবস্থান করছেন শাহ মেহমুদ কুরেশি। এরই এক ফাঁকে তিনি বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তুলে ধরেন কাশ্মীর ইস্যু। সেখানে তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই একটি যুদ্ধের পরিণতি কি- সে বিষয়ে অনুধাবন করে বলে তার বিশ্বাস। এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা অনলাইন ডন।
গত ৫ই আগস্ট একতরফাভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে নয়া দিল্লি। এরপর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতের সিদ্ধান্তে কাশ্মীরে অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কায় সেনাবাহিনী দিয়ে দমনপীড়ন চালাচ্ছে ভারত। সামান্য কিছু জায়গা বাদে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে আপনি একটি আকস্মিক যুদ্ধের বিষয় উড়িয়ে দিতে পারেন না। পরিস্থিতি যদি একই থাকে, তাহলে যেকোন কিছু ঘটা সম্ভব।
এর আগে মঙ্গলবার জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের প্রতি ভারত দখলীকৃত কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক তদন্ত শুরু করার জন্য আবেদন জানান তিনি। সাংবাদিকদের কাছে তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে তিনি মিসেস ব্যাচেলেটের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাকে ভারত নিয়ন্ত্রিত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কুরেশির ভাষায়, ব্যাচেলেটের উচিত উভয় স্থান পরিদর্শন করা এবং নিরপেক্ষ একটি রিপোর্ট দেয়া, যাতে বিশ্ব সত্য পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি জানান, মিসেস ব্যাচেলেট এই সফরে যেতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে তার অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসনের সম্ভাব্যতা খারিজ করে দেননি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, নয়া দিল্লির যে মানসিকতা এবং পরিবেশ আমরা দেখছি তাতে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার কোনো সুযোগ দেখছি না। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে বহুপক্ষীয় একটি ফোরাম অথবা তৃতীয় একটি পক্ষের মধ্যস্থতা প্রয়োজন। কুরেশি আরো বলেন, যদি এ ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্র পালন করে তা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ অঞ্চলে তাদের রয়েছে বিবেচ্য প্রভাব। মঙ্গলবার ৪২তম জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেন শাহ মেহমুদ কুরেশি। তিনি এদিন ভারত দখলীকৃত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত করতে একটি কমিশন গঠনের জন্য পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তিনি পরিষদকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, যদি কিছু লুকানোর নাই থাকতো তাহলে কাশ্মীরে এই পরিষদ, আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর প্রবেশাধিকার দিত ভারত। কুরেশি আরো বলেন, দখলীকৃত কাশ্মীরের মানুষগুলো পর্যায়ক্রমিক ভয়াবহ দুর্ভোগের শিকার। তাদের মৌলিক স্বাধীনতা ধারাবাহিকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।