তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান জানিয়েছেন, মার্কিন প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন।
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ক্রয়ের পর যে সংকট তৈরি হয়েছে, মার্কিন নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দিয়ে তিনি তা উতরে যেতে পারবেন বলে মনে করেন।
গত জুলাইয়ে রুশ এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কেনার পর তুরস্কের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তুরস্কের কাছে রেইথিওন কো’স প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা বিক্রির সময় শেষ।
কিন্তু বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এরদোগান বলেন, সপ্তাহ দুয়েক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি প্যাট্রিয়ট কেনার কথা আলাপ করেছেন। আসছে সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যখন তাদের বৈঠক হবে, তখন এ নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
শুক্রবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, এস-৪০০ এর মতো যেকোনো প্যাকেজই আমরা পাই না কেন, সেটি কোনো ব্যাপার নয়। আমরা আপনাদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক প্যাট্রিয়ট কিনতে পারি।
‘কিন্তু আমি বলেছি, এখানে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, সেটি এস-৪০০ ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খেতে হবে।’
সে ক্ষেত্রে যৌথ উৎপাদন ও অনুকূল ঋণ শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন তুরস্কের এ নেতা। তিনি বলেন, ট্রাম্প বলেছেন- আপনি কি আন্তরিক? আমি বলেছি- হ্যাঁ, অবশ্যই।
কাজেই সাক্ষাতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন এরদোগান।
ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের দায়ে তুরস্কের প্রধান রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হ্যালকব্যাংককে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বড় অঙ্কের জরিমানা থেকে ট্রাম্পের কাছে সুরক্ষা চাইবেন কিনা জানতে চাইলে এরদোগান বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে, এ রকম ভুল এড়িয়ে যেতে পারব।
দুই নেতার মধ্যে ভিন্ন ধরনের আস্থা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মত হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশ তার মিত্র তুরস্ককে আর আঘাত করতে চাইবে না। কারণ এটি কোনো যৌক্তিক আচরণ হতে পারে না।
ইস্তানবুলের বসফরাসে উসমানীয় দোলমাবাচ প্রসাদে এক সাক্ষাৎকারে এরদোগান এসব কথা বলেন।
ফোরাত নদীর তীর থেকে ইরাক সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত সাড়ে চারশ কিলোমিটারের সিরীয় সীমান্তে একটি নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠা করতে ট্রাম্প ও এরদোগানের মধ্যে আলোচনা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মার্কিন সমর্থিত সিরীয় কুর্দিশ ওয়াইপিজি যোদ্ধারা এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ করছে। রোববার সেখানে দুই দেশ একটি যৌথ সামরিক টহল দিয়েছে। কিন্তু এরদোগান বলছেন, ওয়াইপিজিকে তাড়াতে একটি অভিযানের ব্যাপারে ওয়াশিংটন গড়িমসি করছে।
ওয়াইপিজিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে মনে করছে তুরস্ক। কাজেই সীমান্ত থেকে তাদের তাড়াতে ওঠেপড়ে লেগেছে দেশটি।
তবে চলতি মাসে নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠিত না হলে তুরস্ক একাই অভিযান চালাবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে। এতে তিন বছরের মধ্যে উত্তর সিরিয়ায় তুরস্কের তৃতীয় সামরিক অভিযানের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এরদোগান বলেন, শান্তির জন্য একটি করিডোর অপরিহার্য। আমাদের সীমান্তে সন্ত্রাসীদের করিডোর আমরা সহ্য করব না। এ ক্ষেত্রে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার, আমরা সেটিই করে যাব।
ওয়াইপিজির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জোটে ক্ষুব্ধ ন্যাটো মিত্র তুরস্ক। কুর্দিশ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে গত এক দশক ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহ করছেন কুর্দিশরা। আঙ্কারার আশঙ্কা, দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে কুর্দিশ সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ওয়াইপিজিকে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের কথা উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, তুরস্ক ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কিন্তু আমরা আপনাদের ন্যাটো মিত্র। তাদের আপনারা বিনামূল্যে অস্ত্র দিচ্ছেন। কিন্তু সেই অস্ত্র টাকার বিনিময়েও আমাদের দিচ্ছেন না। এতে আমরা হতাশ। আমি আশা করি, ট্রাম্প সেটি বুঝতে পারবেন।