বিভিন্ন মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিকের ভোটার হওয়ার বা এনআইডি পাওয়ার যে তথ্য এসেছে, তারা চেষ্টা করেছে। কিন্তু ভোটার হতে পারেনি। বাংলাদেশে আসা ১১ লাখ ২২ হাজার রোহিঙ্গার আঙুলের ছাপ ও তথ্য নিয়ে রোহিঙ্গা সার্ভার প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন কেউ চাইলেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না।
আজ সোমবার বিকেলে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনআইডি ডিজি জেনারেল সাইদুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
৪৬ জনের ভোটার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা অপচেষ্টা। এখনো ভোটার হতে পারেনি। চেষ্টা করছে। কিন্তু সফল হতে পারবে না। ৪৬ জনের কেউ এনআইডি পায়নি। দক্ষতার সঙ্গে কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। অপচেষ্টায় কেউই সফল হতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছ ভোটার তালিকার জন্য বদ্ধপরিকর। বিদেশি বা রোহিঙ্গা যাতে ভোটার না হতে পারে, সেজন্য বদ্ধপরিকর। আমরা অত্যন্ত সচেতন। কোনো রোহিঙ্গা বা বিদেশিকে অন্তর্ভুক্ত হতে দেবো না। যে স্ট্যাটাসের হোক, যে সংগঠনের হোক অপচেষ্টাকারীর বিরুদ্ধে আমার আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় বিশেষ কার্যক্রম শেষ করে সার্ভারে তথ্য আপলোড করা হয়। এরপর ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচিং করে যারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য, কেবল তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তিনি বলেন, ১১ লাখ ২২ হাজার রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক আমাদের কাছে আছে। আমার রোহিঙ্গা সার্ভার প্রস্তুত করেছি। এখন যাদের তথ্য নেওয়া হচ্ছে, তাদের আঙুলের ছাপ ও তথ্য প্রথমেই রোহিঙ্গা সার্ভারে ম্যাচ করে দেখা হচ্ছে। কারো তথ্য এ সার্ভারে ম্যাচ করলে মূল সার্ভারে আর যাওয়াই হবে না। এছাড়া খসড়া প্রকাশের আগে আমরা ম্যাচিং করব। কাজেই তারা ভোটার হতে পারবে না।
তিনি বলেন, লাকী বেগম নামের একজন স্মার্টকার্ড আনতে গেলে, মূল সার্ভার থেকে ধরা পড়ে তার এনআইডি সঠিক নয়। জিজ্ঞাসাবাদে চিহ্নিত হয়েছে- তাকে বৈধ এনআইডি দেয়া হয়নি। তাই তাকে পুলিশে দেয়া হয়। তারপর আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করি। তাদের মাধ্যমে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়েছে কিনা এসব দেখি। এতে ৪৬ জন ব্যক্তির ডাটা অসম্পূর্ণ পাওয়া যায়। কারো ফিঙ্গারপ্রিন্ট ঠিকমতো নেই, কারো ফরম সঠিকভাবে আপলোড করা হয়নি। এটা আমরাই চিহ্নিত করেছি।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের ৩২টিকে আমরা বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছি। বিশেষ এলাকার জন্য বিশেষ ফরম পূরণ করা হয় এবং সার্ভারে তথ্য অন্তর্ভুক্তির জন্য বিশেষ কমিটির সুপারিশের প্রয়োজন পড়ে। উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলায় জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে এসব বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে এই অপচেষ্টার সঙ্গে আমরা কক্সবাজারে দু’জন দালালের সম্পৃক্ততা পাই। তাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এছাড়া আমাদের একজন পিয়ন এর সঙ্গে জড়িত।
এনআইডি ডিজি বলেন, কোনো বিদেশি বা রোহিঙ্গা যাতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে, এজন্য আমরা বদ্ধপরিকর। এজন্য সিকিউরিটি ফিচার পরিবর্তন করেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ কমিটিও যাতে সুচারুভাবে কাজ করে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। আমরা স্বচ্ছ ভোটার তালিকার জন্য বদ্ধপরিকর। বিদেশি বা রোহিঙ্গারা যাতে না হতে পারে, সেজন্য বদ্ধপরিকর।
এ সময় ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামের ডবলমুরি উপজেলা নির্বাচন অফিসের একজন পিয়ন, জয়নাল আবেদিন; রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অপচেষ্টায় জড়িত ছিল প্রাথমিক তদন্তে এসেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা ফৌজদারি মামলা দেওয়া এবং বিভাগীয় মামলার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা, সেটাও আমরা দেখছি। ভোটার করতে পারেনি, আইডি দিতে পারেনি, এটেম্পট নিয়েছে, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনোমতে যাতে আইডি কার্ড না পায়, সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারা ভোটার হতে পারবে না। ১১ লাখ ২২ হাজার বায়োমেট্রিক আমাদের কাছে আছে। খসড়া প্রকাশের আগে আমরা ম্যাচিং করবো। কাজেই তারা ভোটার হতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।