১৮০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে ১৫০০ মামলা

আইন ও বিচার ডেস্ক

১৮০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে ফাঁকি দিতে ১৫০০ মামলা

সরকারের ১৮০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিতে নজিরবিহীন মামলার রেকর্ড গড়েছে মেঘনা গ্রুপ। আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও আয়কর ফাঁকি দিতে ২০০১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মামলা করেছে মেঘনা গ্রুপের বিভিন্ন কম্পানি। রাজস্বসংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল ও উচ্চ আদালত সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাজস্ব ফাঁকি দিতে এসব মামলার শুনানিতে আগ্রহ দেখায় না মেঘনা গ্রুপ। শুনানির জন্য ধার্য তারিখগুলোতে তারা একের পর এক সময় চেয়ে আবেদন দেওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের ছলচাতুরি করছে।

universel cardiac hospital

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিচার বিভাগের চলমান দীর্ঘসূত্রতাকে কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আটকে রেখেছে কিছু কম্পানি। এদের মধ্যে মেঘনা গ্রুপ অন্যতম। তারা মামলাকে রাজস্ব ফাঁকির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। কর ফাঁকিতে মেঘনা গ্রুপের একের পর এক মামলা দায়ের নিয়ে আদালতপাড়ায় বিরূপ আলোচনাও রয়েছে।

রাজস্ব ফাঁকি দিতে মামলা দায়েরকারী মেঘনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে তানভীর ফুড লিমিটেড, তানভীর স্টিল মিলস লিমিটেড, ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইউনাইটেড সুগার মিলস লিমিটেড, ইউনাইটেড এডিবল অয়েল মিলস লিমিটেড, তানভীর অয়েল মিলস লিমিটেড, জনতা ফ্লাওয়ার অ্যান্ড ডাল মিলস লিমিটেড, ইউনাইটেড ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তানভীর পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, তাসনিম কনডেন্সড মিল্ক লিমিটেড, তানভীর পেপার মিলস লিমিটেড, তাসনিম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড, ইউনিক পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং সোনারগাঁও সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে মামলা দায়ের করে চলেছে।

আইনজ্ঞরা বলেন, রাজস্বসংক্রান্ত মামলা বেশিদিন ঝুলে থাকা মানে সরকারের কোষাগারের ওপর ধারাবাহিক চাপ সৃষ্টি হওয়া। মূলত জনগণকেই এর বিরূপ ফল ভোগ করতে হয়। তাই এসব মামলা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।

জানা গেছে, এনবিআর যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাট দাবি করলে তার আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে কেউ এনবিআরের অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আবেদন বা উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করতে পারে। উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করার পর আবেদন খারিজ করে এনবিআরে পাঠাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এনবিআরের অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। এ জন্য দাবি করা অর্থের ১০ শতাংশ পরিশোধ করতে হয়। অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজনীয় শুনানি শেষে রায় দেন। এরপর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ফের উচ্চ আদালতে আপিল করে। এভাবে গড়িয়ে যায় বছরের পর বছর।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইন কর্মকর্তা বলেন, আদালতে একবার মামলা দায়ের করার পর তা দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট কম্পানি নতুন নতুন কৌশল নিতে থাকে। ধার্য তারিখগুলোতে শুনানি না করতেও তারা নানা অজুহাত হাজির করে। এতে একদিকে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয় না, অন্যদিকে আদালতে মামলার জট বাড়তে থাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশে যতসংখ্যক মামলার জট রয়েছে তাতে সুযোগসন্ধানীরা তো সুযোগ নেবেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী মামলাকে রাজস্ব ফাঁকির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। মেঘনা গ্রুপও তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান।’

বিচারপতি মানিক বলেন, যেহেতু সরকার এখানে ক্ষতিগ্রস্ত, তাই সরকারকেই এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, বছরের পর বছর মামলা পড়ে থাকে, কিন্তু শুনানির জন্য প্রস্তুত হয় না। আর প্রস্তুত না হলে বিশেষ বেঞ্চ করেও তো শুনানি করা সম্ভব হবে না। তাই অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের একটা টিম করে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রাজস্বসংক্রান্ত মামলাগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এসব মামলা নিষ্পত্তিতে আদালতকেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে জনগণেরও উচিত হবে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে বয়কট করা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে