আদালত বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দুই খণ্ডের অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন।
আজ বুধবার দুপুরে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক ৯ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত কিশোর অপরাধীদের জামিন শুনানি হবে শিশু আদালতে। প্রাপ্তবয়স্ক ৭ জন আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এ সময় জামিনে মুক্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ও আরিয়ান শ্রাবন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার পরবর্তী তারিখ ৩ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানার তামিল বিবরণীর জন্য রেখেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির ১ সেপ্টেম্বর দুই খণ্ডে অভিযোগপত্র দাখিল করেন বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
বুধবার ৭ আসামিকে বরগুনা কারাগার থেকে সকাল সোয়া ১০টায় আদালতে উপস্থিত করা হয়। তারা হলেন- মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজোয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি ও মো. সাগর।
ওই সময় জামিনে মুক্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের মোটরসাইকেলে সাদা পোশাকে আদালতে আসেন। আদালতের সামনে মূলনথি না থাকায় বেলা ২টা পর্যন্ত মামলার শুনানি মুলতবি করা হয়।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কিশোর অপরাধী নাজমুল হাসানের জামিন শুনানি হয় বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে।
জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান মুক্ত আদালতে বলেন, শিশু আইন অনুযায়ী শিশুদের জামিন শোনার এখতিয়ার এই আদালতের নেই। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মামলার মুল নথি বরগুনার সিনিয়ির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করেন।
দুপুর সোয়া ২টায় বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজি মামলার শুনানি শেষে পূর্বের দাখিলকৃত অভিযোগ পত্রের দুই খণ্ডের ২৪ জন আসামির বিরুদ্ধে দন্ডবিধি আইনের ৩০২/ ৩৪/ ১৩৯/ ২১২/১২০ (বি-১) ধারায় অভিযোগ আমলে নেয়।
একই সঙ্গে মামলার পলাতক ৯ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির করেন আদালত। ওই ৯ আসামি হলেন- মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, মুছা, রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, আবদুল্লাহ ওরফে রায়হান, নাঈম, নাকিবুল হাসান নিয়ামত, সায়েদ মারুফ বিল্লাহ ওরফে মহিবুল্লাহ, মারুফ মল্লিক ও প্রেন্স মোল্লা।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই ৮ আসামীর জামিন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে কিশোর অপরাধীদের জামিন শুনানির জন্য রোববার অভিযোগপত্রের দ্বিতীয় খণ্ড শিশু আদালতে প্রেরণ করবেন।
ওই শিশু আদালতে জামিন শুনানি শেষে আবার নথি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফেরত আসবে।
আদালত বলেন, শিশু আইনে মামলা প্রস্তুত হলে তখন বিচারের জন্য নথি একটি শিশু আদালতে অপরটি জেলা ও দায়রা আদালতে বিচারের জন্য প্রেরণ করা হবে। যতদিন পর্যন্ত পলাতক আসামিরা আদালতে হাজির বা গ্রেফতার না হবেন। ততদিন বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে নথি পাঠানো যাবে না।
তবে বয়স্ক আসামিদের ক্ষেত্রে কোনো আইনজীবী ফৌজদারি মিস কেস করলে দায়রা আদালত নথি তলব করতে পারেন। আদালত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের জন্য আগামী ৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্তদের পাশাপাশি কিশোর অপরাধীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলা শিশু আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা শিশু আদালতে জামিনের আবেদন করব।
প্রসঙ্গত, ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে নেয়ার পর সেখানেই রিফাত শরীফ মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে ২৭ জুন বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।
এই মামলায় প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এ ছাড়া এজহারভুক্ত সাতজন আসামি এবং হত্যায় জড়িত সন্দেহে মিন্নিসহ আরও আটজন আসামিকে বিভিন্ন তারিখে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত ১৫ জন আসামি সবাই রিফাত হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিভিন্ন তারিখে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার ৭ নম্বর আসামি মিন্নি হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। অপর আসামি আরিয়ান শ্রাবন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে থেকে জামিনে আছে।