‘স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় চলতো ক্যাসিনো’

ডেস্ক রিপোর্ট

অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার দায়ে আটক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্য পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তবে তার দেওয়া তথ্য সঠিক কিনা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইতোমধ্যে খালেদের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল ও গুলশান থানায় আলাদা দু’টি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সার্বিক বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মনে করছেন তারা।

র‌্যাবের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, খালেদের নিয়ন্ত্রণাধীন আরও ক্যাসিনো আছে কিনা বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ক্যাসিনোর মতো অবৈধ ব্যবসা চালাতে গেলে অবশ্যই অর্থ ভাগাভাগির বিষয় থাকে। সে বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় নেতা বা সংশ্লিষ্টদের ছত্রছায়ায় ক্যাসিনো পরিচালিত হতো বলে প্রাথমিকভাবে খালেদ জানিয়েছেন। সেসব ‘লিডার’দের ম্যানেজ করার কথা বললেও কারা কারা জড়িত সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

খালেদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে নিশ্চিত না হয়ে এখনই সে বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, তাকে আমরা স্বল্প সময় জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পেয়েছি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যগুলো সঠিক কিনা, নাকি উদ্দেশ্যমূলকভাবে কারও বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

তার নিয়ন্ত্রণাধীন আরও ক্যাসিনো রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অনেক বিষয়েই কিছু তথ্য পেয়েছি, তবে মনে হচ্ছে এগুলো সঠিক নয়। রিমান্ডে এনে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করলে তথ্যগুলো নিশ্চিত হওয়া যাবে।

খালেদকে এখনও থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠানা হবে বলেও জানান তিনি।

বুধবার রাতে গুলশানের বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকসহ খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক ‍করে র‌্যাব। এসময় তার বাড়ি থেকে তিনটি অস্ত্র, গুলি, ৫৮৫ পিস ইয়াবা, ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫০ টাকা এবং ৬-৭ লাখ টাকা মূল্যের সমমান বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়েছে। অস্ত্রগুলোর একটি লাইসেন্সবিহীন, অপর দু’টি লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে রাখা হয়েছিল।

খালেদকে আটকে তার গুলশানের বাসায় অভিযান চালানোর সময় একযোগে তার নিয়ন্ত্রিত ফকিরাপুলের ইয়াং মেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালান র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ক্লাব থেকে ২৪ লাখ ২৯ হাজার নগদ টাকা ও মাদকসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়।

এর পরপরই বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামে ক্যাসিনোতে ও গুলিস্তানের ওয়ান্ডার্স ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। তবে ক্যাসিনো দু’টিতে কাউকে না পাওয়ায় এগুলো সিলগালা করা হয়। ওয়ান্ডার্স ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকা এবং ২০ হাজার ৫শ জাল টাকা জব্দ করা হয়। সবশেষ গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬শ টাকাসহ ৪০ জনকে আটক করা হয়।

বুধবার রাতে মোট চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে ১৮২ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদের মধ্যে ৩১ জনকে একবছর করে এবং বাকিদের ছয় মাস করে জেল দেওয়া হয়।

রাজধানীতে আরও ক্যাসিনো রয়েছে কিনা জানতে চাইলে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে যে তথ্য ছিল, সে অনুযায়ী সবক’টিতে গতকাল রাতে হিট করা হয়েছে। এর বাইরে আরও ক্যাসিনো রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে