প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ায় কয়েকমাস আত্মগোপনে থাকা পাকিস্তানের নারী সমাজকর্মী গুলালাই ইসমাইল যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। সেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।
বিবিসি জানায়, গুললাইয়ের বিরুদ্ধে ‘দেশদ্রোহ’ এবং ‘নৃশংসতায় উস্কানি’ দেওয়ার কয়েকটি মামলা থাকা পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
তারপরও কিভাবে দেশত্যাগ করলেন জানতে চাইলে তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, যারা আমাকে লুকিয়ে থাকতে এবং দেশ ছড়াতে সাহায্য করেছেন তাদের নিরপত্তার খাতিরে আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে এটুকু বলবো, আমি কোনো বিমানবন্দর থেকে আকাশে উড়িনি।
রেডিও ফ্রি ইউরোপকে তিনি বলেন, তিনি শ্রীলঙ্কা থেকে যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছেন। পাকিস্তানের নাগরিকদের শ্রীলঙ্কা যেতে ভিসা লাগে না।
দেশত্যাগের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, শেষ কয়েক মাস আমি ভয়ানক আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়েছি। আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, হেনেস্তা করা হয়েছে। আমার ভাগ্য ভালো তাই এখনো বেঁচে আছি।
গুলালাই পাকিস্তানে মেয়ে শিশুদের অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতেন।
৩৩ বছরের গুলালাই এখন তার বোনের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে আছেন।
কিশোর বয়সেই মেয়ে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন গুলালাই। বহু বছর ধরেই তিনি পাকিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে নারী ও মেয়ে শিশুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সরাসরি সরকারের সমালোচনা করেছেন।
১৬ বছর বয়সে তিনি কিশোরী-তরুণীদের নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন করতে ‘অ্যাওয়ার গার্লস’ নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ২০১৩ সালে একশ নারীর একটি দল গঠন করেন, যারা পারিবারিক নির্যাতন এবং বাল্যবিবাহ বন্ধে কাজ করেছে।
নিজের সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তিনি অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন।
গুলালাইর বাবা বিবিসি উর্দুকে জানান, ২০১৮ সালের অক্টোবরে লন্ডন থেকে ফেরার পথে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে গুলালাইকে প্রথমবার গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বছর ফেব্রুয়ারিতে তাকে আবারও বেলুচিস্তান প্রদেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ‘পুলিশি হেফাজতে’ পিএএম’র এক নেতার মৃত্যু নিয়ে তদন্তের দাবিতে তিনি সেখানে আন্দোলন করছিলেন।
তারপর মে মাসে ইসলামাবাদে ১০ বছরের পাশতুত শিশু ফারিশতার ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিলে গুললাইয়ের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়।
‘মে মাস থেকেই আমার মেয়ে লুকিয়ে ছিল। তাকে ধরতে পুলিশ দেশজুড়ে অভিযান চালিয়েছে।’