বিদায়বেলায় এমন ভাগ্য অনেক কিংবদন্তিরও হয়নি। হ্যামিল্টন মাসাকাদজার হলো। দীর্ঘ ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার হ্যামিলটন মাসাকাদজা। শুক্রবার ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিই ছিল তার শেষ ম্যাচ। আর এই ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে জিম্বাবুয়েকে জেতালেন তিনি।
তার দল আফগানদের হারিয়েছে ৭ উইকেটে। ২০০১ সালের জুলাইয়ে হারারেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট করে তিনি মোট ৩৮টি টেস্ট, ২০৯টি ওয়ানডে ও ৬৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।
মাসাকাদজার দুর্দান্ত এক ইনিংসে ভর করেই ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিজেদের শেষ ম্যাচটায় জয়ের স্বাদ পেলো জিম্বাবুয়ে। চট্টগ্রামে তারা আফগানিস্তানকে হারিয়েছে ৭ উইকেট আর ৩ বল হাতে রেখেই।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। আর আগেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ের শেষ ম্যাচ ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে। এমন এক দিনে কি দারুণ খেললেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা! বিদায়ের বিরহের মাঝেও হাসি ফোটালেন সতীর্থদের মুখে।
লক্ষ্য ছিল ১৫৬ রানের। আফগানিস্তানের মতো ভালো শুরু করে জিম্বাবুয়েও। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আর ব্রেন্ডন টেলর ওপেনিং জুটিতে ২৯ বলে তুলেন ৪০ রান। তবে ধৈর্য্য ধরে বেশিদূর এগুতে পারেননি টেলর। মুজিব উর রহমানকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ হন ১৭ বলে ১৯ করা এই ব্যাটসম্যান।
এরপর দলের জয়ের ভিতটা আসলে গড়ে দিয়েছেন মাসাকাদজাই। ৪২ বলে ৭১ রানের এক ঝড়ো ইনিংস আসে ‘বিদায়ী’ এই ব্যাটসম্যানের উইলো থেকে, যে ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছিলেন ৪টি বাউন্ডারি আর ৫টি ছক্কায়। মাসাকাদজা আউট হওয়াতে ১১০ রানে ২ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। জয়টা তখন আসলে সময়ের ব্যাপার ছিল। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৩ বলে দরকার ছিল ৪৬ রান।
এরপর ৩২ বলে ৩৯ করে রেগিস চাকাভা আউট হয়েছেন। আর মুতুমবদজিকে সঙ্গে নিয়ে শন উইলিয়ামস (২৩ বলে অপরাজিত ২১) তুলির শেষ আঁচড়টা দিয়েছেন।
এর আগে আফগানিস্তান ইনিংসের শুরুটা যেমন হয়েছিল, মনে হচ্ছিল রান ১৮০ পার হবে। কিন্তু হঠাৎ এক ঝড়ে বিপদে পড়ে যায় রশিদ খানের দল। জিম্বাবুইয়ান বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত আফগানরা তুলে ৮ উইকেটে ১৫৫ রান।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে আফগানিস্তান। দুই ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই আর রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৫৭ বলে গড়েন ৮৩ রানের জুটি। দশম ওভারের তৃতীয় বলে এসে এই জুটিটি ভাঙেন মুতুমবদজি, ২৪ বলে ৩১ রান করা জাজাইকে ফিরিয়ে।
তারপরও বেশ ভালো অবস্থানেই ছিল আফগানিস্তান। ১২ ওভার শেষে তাদের বোর্ডে ছিল ১ উইকেটে ১০০ রান। সেখান থেকে টানা চার ওভারে ৪টি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে দলটি। ফলে শেষ ৮ ওভারে ৭টি উইকেট হারিয়ে মাত্র ৫৫ রান যোগ করতে পেরেছে আফগানিস্তান।
১৩ বলে ১৬ রান করে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন শফিকুল্লাহ। ১৩তম ওভারের শেষ বলে ক্রিস্টোফার এমপুফুকে হাঁটু গেরে মারতে গিয়ে গায়ে লেগে যায় তার। রিভিউ অবশ্য নিয়েছিলেন। তাতে কাজ হয়নি।
পরের ওভারে দারুণ খেলতে থাকা গুরবাজও উইকেট দিয়ে বসেন। স্ট্যাম্প ছেড়ে শন উইলিয়ামসকে মারতে গিয়েছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। পেছন দিক দিয়ে বল ঢুকে মিডল স্ট্যাম্প উপড়ে যায়। ৪৭ বলে ৪টি করে চার ছক্কায় গুরবাজ তখন ৬১ রানে।
তার পরের দুই ওভারে আফগানরা হারায় মোহাম্মদ নবী (৪) আর নাজিবুল্লাহ জাদরানকে (৫)। এরপর আর কেউ সেভাবে ব্যাট হাতে ভয় ছড়াতে পারেননি। গুলবাদিন নাইব ৭ বলে ১০ আর রশিদ খান ৬ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
- রিফাত হত্যা : স্বীকারোক্তিতে ভয়াবহ বর্ণনা মিন্নির
- রোহিঙ্গাদের সু চি ‘বাংলাদেশি’ বলায় বিরক্ত হন ক্যামেরন
জিম্বাবুয়ের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন ক্রিস্টোফার এমপুফু। ৪ ওভারে ৩০ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন এই পেসার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ৭ উইকেটে জয়ী জিম্বাবুয়ে।
আফগানিস্তান ইনিংস: ১৫৫/৮ (২০ ওভার)
(রহমানুল্লাহ গুরবাজ ৬১, হযরতউল্লাহ জাজাই ৩১, শফিকুল্লাহ ১৬, নাজিবউল্লাহ জাদরান ৫, মোহাম্মদ নবী ৪, গুলবদিন নাইব ১০, ফজল নিয়াজাই ১২, রশীদ খান ৯*, আসগার আফগান ০, দৌলৎ জাদরান ০*; এনডিলোভু ০/২৩, জারভিস ১/২৭, উইলিয়ামস ১/৩৪, এমপোফু ৪/৩০, বার্ল ০/১৩, মাদজিভা ০/৬, মুতোমবোদজি ২/১৮)।
জিম্বাবুয়ে ইনিংস: ১৫৬/৩ (১৯.৩ ওভার)
(ব্রেন্ডন টেইলর ১৯, হ্যামিলটন মাসাকাদজা ৭১, রেজিস চাকাভা ৩৯, শন উইলিয়ামস ২১*, মুতোমবোদজি ১*; মুজিব উর রহমান ২/২৮, দৌলৎ জাদরান ১/২৭, গুলবদিন নাইব ০/১৯, মোহাম্মদ নবী ০/৪০, রশীদ খান ০/২৯, ফজল নিয়াজাই ০/১৩)।
প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: ক্রিস এমপোফু (জিম্বাবুয়ে)।