ফেনীর সোনাগাজীতে এক বিধবাকে ধর্ষণে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর পুলিশের এক এএসআইকে ওই থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোনাগাজী মডেল থানার উপ-সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) সুজন কুমার দাসকে প্রত্যাহার করে শুক্রবার জেলা পুলিশ লাইনে আনা হয়।
ফেনীর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সোনাগাজী-দাগনভূইয়া সার্কেল) সাইকুল আহমেদ ভূঁইয়া জানান, বিষয়টি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের অপরাধ বিভাগের পুলিশ সুপার হাসান মাহমুদ তদন্ত করছেন।
তবে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ দাবি করেছে, ওই বিধবার জমিজমা সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে গাফিলতির জন্য এএসআই সুজনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গত বৃহস্পতিবার ওই বিধবা ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া হোসেনের আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পরপরই প্রত্যাহার করা হয় এএসআই সুজনকে।
ওই নারী জবানবন্দিতে বলেছেন, অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা সুজনও তাকে ধর্ষণ করেছিলেন। তবে পুলিশের ভয়ে তিনি মামলার এজহারে এএসআই সুজনকে আসামি করেননি।
ওই বিধবার স্বজনরা জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ১০ সেপ্টেম্বর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপুর গ্রামে কালা মিয়া ও তার ছেলে মাসুদসহ কয়েকজনের হামলার শিকার হয় ওই বিধবার পরিবার।
তখন ওই সোনাগাজী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী। তা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন এএসআই সুজন। এরপর থানায় এক নারী প্রতারকের খপ্পরে পড়েন ওই নারী।
বিধবা ওই নারীর অভিযোগ, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রহিমা নামে ওই প্রতারকের সহযোগিতায় সঞ্জু শিকদার, আফলাছসহ পাঁচজন তাকে ধর্ষণ করে, তার সঙ্গে থাকা গহনা ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং ঘটনাটি নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি’ না করার হুমকি দেয়।
ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ওই নারী থানায় গেলে এএসআই সুজন তা আসামিদের জানিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ওই নারী বাদী হয়ে দাগনভূঞা উপজেলার খোকন শিকদারের ছেলে মুচি সঞ্জু শিকদার, আফলাছ হোসেন এবং সোনাগাজীর চর দরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী গ্রামের নূরুজ্জামানের মেয়ে রহিমাসহ অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন।
রহিমা তিন বছর ধরে মডেল থানায় কর্মরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় বুয়ার কাজ করছিলেন।
পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে সঞ্জু শিকদার ও রহিমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এএসআই সুজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এদিকে ধর্ষণের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খালেদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আসামি সঞ্জু সিকদার ও রহিমাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
চলতি বছরের মার্চে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠার পর এএসআই সুজনের কাণ্ডে নতুন করে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলার পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল নুসরাতকে। ওই ঘটনায় সোনাগাজী মডেল থানা তৎকালীন ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।