শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

বশেমুরবিপ্রবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
বশেমুরবিপ্রবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা। ছবি : সংগৃহিত

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গোবরা এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার পর দুপুরে পদত্যাগ করেন সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির।

universel cardiac hospital

এর আগে হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে গেলে সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবিরকে ঘিরে ধরেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে প্রক্টর হুমায়ুন কবিরের পা ধরে কান্না করে বাঁচার আকুতি জানান শিক্ষার্থীরা।

এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির। পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির বলেন, `আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু আমি কিছুই করতে পারিনি। আমি আমার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি, তাই নৈতিক জায়গা থেকে পদত্যাগ করেছি।’

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সরাসরি পদত্যাগপত্র জমা দিতে না পারলেও মৌখিকভাবে বিষয়টি রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তাদের জানিয়েছি আমি।

হুমায়ুন কবিরের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নুরউদ্দিন আহমেদ বলেন, পদত্যাগপত্র এখনো জমা দেননি সহকারী প্রক্টর। তাহলে তিনি কীভাবে পদত্যাগ করলেন। হুমায়ুন কবির পদত্যাগ করতে চাইলে করতে পারেন। এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়।

এর আগে সকালে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ৪০-৫০ জনের একটি দল তাদের ওপর রামদা, হকিস্টিক এবং লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হন।

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিশারিজ দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর মাথা ইট দিয়ে ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত শিক্ষার্থীদের গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার নাসির উদ্দিনের প্রত্যক্ষ নির্দেশে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এ নির্দেশ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, শুক্রবার রাত থেকে আমাদের হলে খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে হলে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমাদের ওপর বহিরাগতরা হামলা চালিয়েছে ২০ জন আহত করেছে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ১৪৪ ধারা জারি করার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নুরউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য হলের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসককে ১৪৪ ধারা জারি ও পুলিশ সুপারকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পাসে মোতায়নের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি তিনি।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত ছয় মাসে সাত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃত ওই শিক্ষার্থীদের অপরাধ উপাচার্য ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে শিক্ষকদের নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় আইন বিভাগের ছাত্রী ও সাংবাদিক ফাতেমা তুজ জিনিয়াকে বহিষ্কার করা হয়।

এ ঘটনার পর জিনিয়াকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা আন্দোলন শুরু করেন। সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে গত বুধবার জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ওইদিন রাত থেকে ভিসি খন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে