জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ রোববার থেকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর বাড়ানো হয়েছে ভর্তি ফরমের মূল্য। ফরম বিক্রি থেকে এবার প্রায় ২০ কোটি টাকা আয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বছর ৩৪টি বিভাগ ও ৩টি ইনস্টিটিউটে ১৮৮৯ আসনের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৬২ ভর্তিচ্ছু।
জানা গেছে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফরম বিক্রি বাবদ ‘এ’ ইউনিটে ৬৮ হাজার ৮৯৫ জন ভর্তিচ্ছু থেকে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, ‘বি’ ইউনিটের ৪৯ হাজার ৮৩৩ জন থেকে প্রায় ২ কোটি ৯০ লাখ, ‘সি’ ইউনিটের ৬০ হাজার ৬১৫ জন থেকে প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ, ‘সি১’ ইউনিটের ৯ হাজার ২৬৮ জন ভর্তিচ্ছু থেকে আয় হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ‘ডি’ ইউনিটের ৭৬ হাজার ৫৪০ জন থেকে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ‘ই’ ইউনিটের ২০ হাজার ৮৫৬ জন থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ‘এফ’ ইউনিট থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ‘জি’ ইউনিট থেকে ৩৬ লাখ টাকা, ‘এইচ’ ইউনিট থেকে ৭৯ লাখ টাকা এবং ‘আই’ ইউনিট থেকে আয় হয়েছে ৩৮ লাখ টাকা।
ফলে এবার ফরম বিক্রি বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৯১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগ বলছে, ভর্তি পরীক্ষা-সংক্রান্ত খরচ বাদ দিয়ে এবার ১২ কোটি টাকা অবশিষ্ট থাকতে পারে।
এদিকে গত বছর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ১৮৮৯টি আসনের বিপরীতে ভর্তিচ্ছু ছিল ৩ লাখ ৬ হাজার ২৭৪ জন। ওই বছর ভর্তির ফরম বিক্রি বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় আয় করেছিল ১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ভর্তির যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট ছিল ৯ কোটি টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখার তথ্য মতে, এ বছর এ, বি, সি, ডি, এবং ই ইউনিটের ভর্তি ফরমের মূল্য গত বছরের চেয়ে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া সি১, এফ, জি, এইচ এবং আই ইউনিটের ফরমের মূল্য ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগ আলাদা ফি নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কারণে একজন শিক্ষার্থীকে শুধু মানবিকের বিভাগগুলোর জন্য ফি গুনতে হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অমান্য করে নানা সমালোচনার মুখেও বারবার বাড়ানো হয়েছে ভর্তি ফরমের দাম। এ নিয়ে গত ৮ বছরে ভর্তি ফরমের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে ৭২ শতাংশ।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান, কলা অনুষদের সব বিভাগের জন্য ‘বি’ ইউনিটের অধীনে একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষায় এমসিকিউ ও লিখিত উভয়ের জন্য ফি দিতে হয়েছে মাত্র ৪৫০ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের সিদ্ধান্তকে ‘ফরম বাণিজ্য’ হিসেবে দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাণিজ্যিক মানসিকতা ভর্তি পরীক্ষাকে একটি ভর্তি বাণিজ্যে পরিণত করেছে। এই দেশের খেটে খাওয়া মানুষের টাকায় চলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যালয় বানানোর পাঁয়তারা ছাত্রসমাজ রুখে দেবে।
- বিটিভিতে ফিরছে শিশুশিল্পী অন্বেষণের অনুষ্ঠান ‘নতুন কুঁড়ি’
- পুঁজিবাজার : তারল্য বাড়াতে অর্থ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমার ধারণা যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি এগুচ্ছে তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এর পুনর্বিন্যাস করা দরকার। কীভাবে পরীক্ষার চাপ ও অর্থ ব্যয় কমিয়ে পরীক্ষা নেয়া যায় তা নিয়ে ভাবা উচিত। বার বার ফরমের মূল্যবৃদ্ধিতে শিক্ষকদের সম্মানী বাড়ানো ছাড়া আর কোনো কারণ দেখি না।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ভর্তি পরীক্ষার ফরমের মূল্য কমানোর আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেই। আগামীতে হয়তো এসব থাকবে না। সরকার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কথা ভাবছে।