অব্যাহত থাকুক অবৈধ ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান

সম্পাদকীয়

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের নাড়া দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযান। রাজধানীর ক্লাবকেন্দ্রিক জুয়ার আসর ও ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো সাধারণ মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চস্তরের কর্মকর্তাদের এই ধরনের আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার খবর প্রকাশিত হয়েছে যা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়।

দীর্ঘ সময় ধরে যখন একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তখন দলটিতে অনেক সুযোগ সন্ধানী আগাছা-পরগাছার অনুপ্রবেশ ঘটে। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ট্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের ধনসম্পদ অর্জনই হয় তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। বহু ভঙ্গুর পথ অতিক্রম করে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আজ টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই দলটিতেও অনেক দুষ্ট লোকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই অনুপ্রবেশকারীরাই দলের নাম ভাঙিয়ে দখলবাজি-চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে। গড়ে তুলেছে অবৈধ সাম্রাজ্য।

প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনায় সেই সাম্রাজ্যে হানা দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযান শুরুর পর থেকে গণমাধ্যমে যেসব তথ্য বেড়িয়ে আসছে তা থেকে দেখা যাচ্ছে, সম্পূর্ণ বদলে গেছে রাজধানীর ক্লাবকেন্দ্রিক সংস্কৃতির অতীত চিত্র। গণমাাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, সরকারি দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় ঢাকার স্পোর্টস ক্লাবগুলো ঘিরে কয়েক দশক ধরে রমরমা জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এই জুয়ার আসরগুলোকে ক্যাসিনোতে উন্নীত করা হয়।

গত বুধবার সন্ধ্যায় র‌্যাব অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে। একই দিন রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজধানীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পর চট্টগ্রামের বেশির ভাগ জুয়ার আসর ও বার বন্ধ হয়ে গেছে বলে খবরে প্রকাশ।

অপরাধ দমনে শেখ হাসিনা সরকারের এই উদ্যোগকে জনগণ সাদরে গ্রহণ করেছে। জনগণ চায় শুধু ছাত্রলীগ-যুবলীগ নয়, অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়। এই অভিযান যেন কিছুসংখ্যক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের মধ্যেই সীমিত না থাকে। যদি এ ধরনের অভিযান চলমান থাকে তবেই জনগণ এটিকে ভালো চোখে দেখবে বলে সচেতন নাগরিকগণ মনে করেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রশাসন ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যেসব উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপকর্মের তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে তাদেরকেও বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। আমরা মনে করি, শুধু রাজধানী বা বন্দরনগরীতে অভিযান নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যারা সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে দখলবাজি-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে যাচে্ছ তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। জনমনে আস্থা ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনাসহ দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে