ইসি রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দেয়ার একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার পর জালিয়াতি ও দুর্নীতি বন্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেছে।
দুটি তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রাথমিক তথ্যে সন্দেহভাজনের তালিকায় থাকা ১৫ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
আজ সোমবার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সাংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এনআইডি জালিয়াতি বন্ধে যা যা দরকার, তার সবই করা হবে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের মূল ডেটাবেজ সুরক্ষিত আছে। যারা এখানে ঢোকার অপচেষ্টা করেছিল তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইটি বিভাগ এই অপচেষ্টাকারীদের চিহ্নিত করেছে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।
এটা বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সিআইডি, দুদক, এসবির সহায়তাও নেয়া হবে বলেও আভাস দেন এই কর্মকর্তা।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক রোহিঙ্গা নারী ভুয়া এনআইডি সংগ্রহ করে পাসপোর্ট নিতে গিয়ে ধরা পড়েন। এরপর এনআইডি জালিয়াত চক্রের খোঁজে নামে নির্বাচন কমিশন। আটকে দেয়া হয় রোহিঙ্গা সন্দেহে অর্ধশত এনআইডি বিতরণ।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৭-২০০৮ সালে ব্যবহৃত কিছু অকেজো ল্যাপটপ নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় অন্তত পাঁচটি ল্যাপটপ হারিয়ে যায়, যার দুটি জালিয়াত চক্রের হাতে পড়ে বলে সন্দেহ তদন্ত দলের।
অন্যদিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে দুই দালালকে আটক করার পর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনকে গ্রপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে সেই ল্যাপটপ দুটির একটি উদ্ধার করা হয়।
পরে জয়নালের তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ল্যাপটপসহ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অধীনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে অস্থায়ী কর্মী মোস্তফা ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ জালিয়াত চক্রের সঙ্গে কতজন সম্পৃক্ত তার সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ না করলেও মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে নাম বলতে চাই না। পর্যায়ক্রমে তাদের নাম প্রকাশ করব। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এর সঙ্গে কতজন জড়িত। তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার স্বার্থে আমরা এখনই তাদের নাম প্রকাশ করছি না। তবে এই সংখ্যা ১৫ জনের বেশি না।
এক প্রশ্নের জবাবে সাইদুল জানান, ২০১২ সালে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা থেকে ইসির চারটি এবং বিভিন্ন সময় আরও তিনটি ল্যাপটপ হারিয়েছিল। তবে সার্ভারে প্রবেশের জন্য ইসির নির্ধারিত পাসওয়ার্ড ও মডেম থাকতে হয় বলে ওই ল্যাপটপগুলো দিয়ে সার্ভারে প্রবেশ করা সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাইদুল ইসলাম বলেন, কারো বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে আমরা দুদকের সহযোগিতা নেব। শুধু দুদক নয়, যে কোনো সংস্থার কার্যক্রমকে আমরা স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ব্যাপারে যাদেরই সম্পৃক্ততা পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। এখানে যদি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে হয় আমরা তা করব। ফৌজদারি মামলা করতে হলে আমরা তাও করব।
সংবাদ সম্মেলনে ইসির এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেন, ইসির আইসিটি মেনটেইনেন্স ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ হোসেন, ৫ সদস্যের প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির প্রধান এনআইডি উইং পরিচালক খোরশেদ আলম, কারিগরি বিশেষ তদন্ত কমিটির প্রধান এনআইডি পরিচালক ইকবাল হোসেন ও সদস্য এনআইডি উইংয়ের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাহাব উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।