জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে আগামী শুক্রবার বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চারটি প্রস্তাব দেবেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে রোহিঙ্গা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নতুন প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে আমি পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। যেখানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলোর সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন, রাখাইন রাজ্যে আলাদা ‘বেসামরিক পর্যবেক্ষিত সেইফ জোন’ প্রতিষ্ঠা কথা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এবার আমি নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে (ইউএনজিএ) উপস্থাপন করবো।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ওআইসি সেক্রেটারিয়েট এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ‘রোহিঙ্গা সংকট : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের একটি অনুষ্ঠানে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সোমবার ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘এখনি অভিযোজন, মানুষকে নিরাপদ করা’ এই বিষয়ে অনুষ্ঠিত সামিটে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় তার সরকারের নেয়া কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে আয়োজিত এই সামিটে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাকে গোটা বিশ্বের জন্যে চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূর রানি মাক্সিমার সঙ্গে একটি সৌজন্য বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেসের দেয়া মধ্যাহৃ ভোঁজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামী শুক্রবার বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যেসব প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন সেগুলো হলো-
১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছে পরিষ্কার করতে হবে। এজন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী করছে সেটাও সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে।
২. বৈষম্যমূলক আইন ও চর্চা পরিত্যাগ করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন রাজ্যে ‘যাও এবং দেখ’ এই নীতিতে পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে।
৩. রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েন করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গাসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) দিতে হবে।
৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো বিবেচনায় নিতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক নির্বাসিত ১ দশমিক ১ মিলিয়ন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা আমাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিলাম যা ইসলামের নৈতিক শিক্ষা।