ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাকসু।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’র (ডাকসু) কার্যালয়ে তৃতীয় কার্যকরী পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর প্ল্যাটফর্ম পরিবেশ পরিষদ ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এবার ডাকসু থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তটি আসল।
এ বিষয়ে ডাকসুর এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি আমাদের কার্যনির্বাহী সভার এজেন্ডায় ছিল। সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্তটি পাস হয়েছে।
প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাশাপাশি সিনেট ও সিন্ডিকেটে উত্থাপন করা হয়।
সাদ্দাম আরও বলেন, ডাকসুর এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ‘৭২-এর সংবিধানের যে মৌলিক বিষয়গুলো ছিল তা পুনর্বহালের শুভসূচনা হল। আমরা আশা করছি আগামীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। এর মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে চেতনা সেটির বাস্তবায়ন হবে।
সভা সূত্র জানায়, ডাকসু’র ২৫ জন নির্বাচিত প্রতিনিধির মধ্যে জিএস গোলাম রাব্বানীসহ মোট তিনজন সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর আগে রাব্বানীকে বিভিন্ন অপরাধের দায়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
ডাকসুর সভাপতি ও ভিসি অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, ভিপি নূরুল হক নূরসহ অন্য সম্পাদক ও সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন ডাকসু’র এজিএস সাদ্দাম হোসেন।
সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্য জানান, ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে উত্থাপন করেন। যেহেতু এ বিষয়ে ইতিপূর্বে পরিবেশ পরিষদের সিদ্ধান্ত ছিল, তাই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরে আলোচনা হয়। পরবর্তীকালে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তাবটি গৃহিত হয়।
এ ছাড়া সভার শেষ দিকে ভিপি নূরুল হক নূর জিএস গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের দাবি তোলেন।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে যদি তাকে নৈতিক স্খলনের দায়ে অপসারণ করা হয়, তাহলে ডাকসুর মতো একটি পবিত্র জায়গা থেকে কেন তাকে অপসারণ করা হবে না। পরে তার কথার প্রেক্ষিতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী ভিপি’র সন্তানের বিষয়টি উল্লেখ করে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। তখন ভিপি বিষয়টিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ উল্লেখ করে সভা শেষ হওয়ার পূর্বে সভাস্থল ত্যাগ করেন।
‘গণরুম’কে ‘বন্ধুরুম’ করার প্রস্তাব
সভায় আবাসিক হলগুলোতে গণরুমে শিক্ষার্থীদের জীবন-মান উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সদস্যরা এ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। এ সময় ডাকসুর সদস্য ও সিনেট সদস্য তিলোত্তমা সিকদার ‘গণরুম’কে ‘বন্ধুরুম’ নামে নামকরণের প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, গণরুম একটি আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নবীন শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। আমরা এটিকে ‘বন্ধুরুম’ আখ্যা দিতে চাই। কারণ এখানে একই বর্ষের সবাই থাকে। একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় সবার মধ্যে।
মেয়েদের হলগুলোতে আমরা দেখেছি অনেক রুম পেয়েও গণরুমে সময় কাটাতে আসে। কারণ সেখানে বন্ধুরা রয়েছে, পড়ার জন্য কক্ষ রয়েছে, ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে, ব্লাংক বেড রয়েছে এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাস রয়েছে। এই পরিবেশ সবগুলো হলে নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে গণরুম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক আর থাকবে না।
গণরুমের বিষয়ে প্রস্তাবনাগুলো লিখিতভাবে হলগুলোকে জানানো হবে বলেও ডাকসুর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি ডাকসুর সদস্য নজরুল ইসলাম প্রস্তাব দেন, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে হলগুলোর আকাড় অনুযায়ী যাতে শিক্ষার্থী দেয়া হয়। বড় হলে বেশি শিক্ষার্থীর সিট বরাদ্দ দিলে এবং ছোট হলে কম শিক্ষার্থী দিলে আসন সংকট চরমে পৌঁছবে না। গণরুম সংকট নিরসনে আপদকালীন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাবও ছিল তার।
সভায় লাইব্রেরি সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়। নিয়মিত শিক্ষার্থীরা যাতে লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারে তা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
- আরও পড়ুন >> বাংলাদেশকে ১০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক
ডাকসু’র সদস্য সবুজ তালুকদার এ জন্য স্মার্ট কার্ডের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেন। যার মাধ্যমে পাঞ্চ করে লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে হবে। এই কার্ডের ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড জালিয়াতির বিষয়টিও রোধ করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ ছাড়া বৈঠকে সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সব কোর্সের মান ও সার্বিক দিক নিয়ে কারও কোনো পরামর্শ থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত সান্ধ্যকালীন কোর্সের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ নিয়ে গঠিত কমিটিকে এ বিষয়ে জানানো যাবে। এ ছাড়া সভায় মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে সব কর্মসূচি হয়েছে তার পর্যালোচনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের মানের তদারকির বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পায়।