বর্তমানে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও ৩০টি বেসরকারি টেলিভিশন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। আগামী বুধবার থেকে দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওই দিন সবগুলো টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) চুক্তিপত্র হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।
২ অক্টোবর (বুধবার) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক সেবাও শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্যাটেলাইট কোম্পানি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ।
এর আগে ১৯ মে বিসিএসসিএলের সঙ্গে ছয়টি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল – সময় টিভি, যমুনা টিভি, দীপ্ত টিভি, বিজয় বাংলা, বাংলা টিভি ও মাই টিভি আনুষ্ঠানিক চুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করছে।
তা ছাড়া বিটিভির চারটি চ্যানেলও একইভাবে এই স্যাটেলাইট দিয়ে সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
ইতোমধ্যে টেলিভিশনগুলোর সঙ্গে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিসিএসসিএল।
সবগুলো টিভি চ্যানেল মিলে প্রায় সাড়ে পাঁচ ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি ব্যবহার করবে। এ ছাড়া এর আগে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানি ডাইরেক্ট টু হোম বা ডিটিএইচ স্যাটেলাইট টিভিতে অনুষ্ঠান সম্প্রচারে ছয়টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিয়েছে। তাদের ব্র্যান্ড আকাশ সেবা দেওয়াও শুরু করেছে। সব মিলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ক্ষমতা ৪০ ট্রান্সপন্ডারের।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ চাম্পিয়নশিপ সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে। দেশের একমাত্র স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেটিই ছিল প্রথম টেলিভিশন সম্প্রচার। পরে এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দুবাইতে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের সম্প্রচারসহ আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন।
শাহজাহান মাহমুদ বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজার থেকেই আট বছরের মধ্যে স্যাটেলাইট উক্ষেপণের খরচ হওয়া দুই হাজার সাতশো কোটি টাকা উঠে আসবে।
গত বছর ১২ মে বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে উক্ষেপণ করা হয় দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।
উৎক্ষেপণের ৬ মাস পর ৯ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফরাসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস অ্যালেনিয়ার কাছ থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব বুঝে পায় বাংলাদেশ।
এখন গাজীপুরের তেলিপাড়া ও রাঙামাটির বেতবুনিয়া থেকে দেশের প্রকৌশলীরা নিয়ন্ত্রণ করছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।
দেশের উপকূলীয় দ্বীপ ও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগাযোগ সেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও সাইবার নিরাপত্তায় নিজস্ব স্যাটেলাইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও বঙ্গবন্ধু স্যাটেল্যাইটের চারটি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দেয়ার বিষয়ে ফিলিপিন্সের সঙ্গে আলোচনা শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। সেবা নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে নেপালও।
ইতোমধ্যে সরকারের বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় এ স্যাটেলাইট থেকে সংযোগ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাছাড়া কোম্পানির পক্ষ থেকে সেবা নিতে ৪৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকও তাদের এটিএমগুলোতে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করবে বলে জানা গেছে।
প্রথম স্যাটেলাইটকে আরও ব্যবসা সফল করার পাশাপাশি সরকার দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণেও ইতোমধ্যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।