অনৈতিক সম্পর্কের ঘটনায় পল্টন থানার ওসি বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলা

মত ও পথ প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

চাকরির প্রলোভনে ঢাকায় এনে এক তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ঘটনায় পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী তরুণীর দেয়া লিখিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় আজ সোমবার তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয় বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা।

সূত্র জানায়, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত প্রতিবেদনে ওসি মাহমুদুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। সোমবার বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এক কার্যালয় আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করেছে সংস্থাটি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে পুলিশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগে জানা যায়, ফেসবুক ও ফোনে দীর্ঘদিনের আলাপের ঘনিষ্ঠতায় তরুণীকে ভালো চাকরি পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে ঢাকায় ডেকে আনেন পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক। পরে তাকে রাখেন পল্টনের একটি হোটেলে। ওই দিন রাতে হোটেল বয় তরুণীকে স্যুপ দিয়ে যান, যা খেয়ে তরুণী ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দুইটায় ঘুম ভাঙলে তরুণী দেখেন ওসি মাহমুদুল হক তার পাশে শুয়ে আছেন। বুঝতে পারেন তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

এ সময় ওসি মাহমুদুল তরুণীকে বলেন, তিনি তাকে ভালোবাসেন। স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। তাকে তালাক দিয়ে এই তরুণীকে বিয়ে করবেন। এরপর তার সঙ্গে মাসের পর মাস শারীরিক সম্পর্ক করেছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

তরুণীকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় এনে ধর্ষণ ও পরে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে গেলেও পরে ওসি মাহমুদুল ওই তরুণীকে বিয়ের বদলে উল্টো ক্ষতি করার হুমকি দেন। পরে তরুণী পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

জানা যায়, কলেজে পড়ার সময় ফেসবুকে মাহমুদুল হকের সঙ্গে ওই তরুণীর পরিচয়। প্রায়ই ফোনে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হতো তাদের। দীর্ঘদিনের এই যোগাযোগ ও পুলিশের দায়িত্বশীল পদে থাকা মাহমুদুলকে বিশ্বাসে ঠাঁই দেন তিনি। 

তরুণীর ভাষ্য, ‘২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় ডাকেন মাহমুদুল। ঢাকায় এলে আমাকে হোটেল ক্যাপিটালে তোলেন। ওই দিন রাতের খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে আমাকে অচেতন করা হয়। আমি ঘুমিয়ে পড়লে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন মাহমুদুল। জ্ঞান ফেরার পর আমি তার কাছে এমন আচরণের কারণ জানতে চাইলে সে বলে- আমাকে সে অনেক ভালোবাসে। আমাকে সরাসরি প্রস্তাব দিলে আমি হয়তো রাজি হতাম না। তাই চেতনানাশক মিশিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এ সময় আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয় মাহমুদুল। এই প্রতিশ্রুতিতে ওই রাতে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে সে।’

কোরআন শরিফের ওপর হাত রেখে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন ওসি মাহমুদুল- এমন দাবি করে তরুণীটি বলেন, ‘আমি নিরুপায় হয়ে তার প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য হয়। এরপর প্রতি সপ্তাহে আমাকে ঢাকায় ডেকে এনে একই হোটেলে রাখত। গত বছরের অক্টোবরে বুঝতে পারি আমি অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি তাকে জানালে সে আমাকে দ্রুত বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে গর্ভপাত করতে বলে। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে তার কথায় গর্ভপাত করাই আমি। এরপর মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও সে আর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। গত ২ এপ্রিল আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় মাহমুদুল।’

১২ এপ্রিল ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই তরুণী। তার পরিবার সবকিছু জানতে পেরে তারা মাহমুদুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। এ সময় তরুণীর পরিবারকে উল্টো হুমকি দেওয়া হয়, পল্টন থানার ওসির অনেক ক্ষমতা, বাড়াবাড়ি করলে তরুণীর অনেক ক্ষতি হবে।

আইজিপি বরাবর অভিযোগে তরুণী লেখেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কয়েকবার মাহমুদুলের বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়। প্রথমে তার বাবা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেন। কিছুদিন পর তিনি হঠাৎ আমার পরিবারকে হুমকি দিতে থাকেন। আমাকে বলেন, আমি যদি তার ছেলের জীবন থেকে সরে না যাই তাহলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। নিরুপায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর অভিযোগ করেছি।’

দুজনের সম্মতিতে তাদের মধ্যকার শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ও ছবি ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো তার কাছে আছে বলে জানান তরুণী।

তরুণীর অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান ডিএমপির সবুজবাগ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোনালিসা। তার দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই  সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ওসি মাহমুদুল হককে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে