পাবনায় পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
পাবনার জেলা প্রশাসক মো. কবীর মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টরা সবাই সচেষ্ট রয়েছেন। প্রশাসন পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বের সঙ্গে নজর রাখছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উজান থেকে প্রবল বেগে পানি ধেয়ে আসার কারণে পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার উপসহকারী প্রকৌশলী সানজানা নাজ জানান, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীর পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার।
তিনি জানান, গত কয়েক দিন ধরেই পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ৫-৬ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। প্রতি ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মঙ্গলবার বেলা ১১টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
এদিকে প্রবল স্রোতে পদ্মা নদীতীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫০০ হেক্টর নানা ফসলি ও নিচু জমি প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার একর জমির নানা জাতের ফসল।
ঈশ্বরদী সাঁড়া ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান রানা সরদার বলেন, গেল কয়েক বছর ধরে পদ্মায় পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। এবারে উজানের অতিপ্রবল বর্ষণ ও ধেয়ে আসা পানির ফলে কোমরপুর থেকে সাঁড়াঘাট পর্যন্ত রক্ষাবাঁধের দুই থেকে তিন ফুট নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস জানান, তার ইউনিয়নের রূপপুর সড়কের নিচু অংশে ফসলসহ জমি তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই পাকশীর বিভিন্ন স্থানে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফসলি জমি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বসতভিটার ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, উপজেলার সাঁড়া, পাকশী ও লক্ষীকুণ্ডা ইউনিয়নের আখ, ফুলকপি, গাজর, মাষকলাই, মুলা, বেগুন, শিম, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ধানসহ ৪০০ হেক্টর জমির সবজি ও ফসল তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে লক্ষীকুণ্ডার দাদাপুর, চরকুরুলিয়া, কামালপুর ও বিলকেদায়। মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে। তবে পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করা যাচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পাওয়া কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ ওরফে কুল ময়েজ জানান, কয়েক দিন ধরে একটানা বৃষ্টিতে এমনিতেই কৃষকদের মাঠের শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পর পদ্মার পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। শত শত কৃষক এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, যে গতিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল, ধারণা ছিল ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। পদ্মার গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোতে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মায় যে হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নদীতীরবর্তীসহ আশপাশের জনমানুষের জন্য অশনিসংকেত। বৃহৎ ক্ষতির আগেই সরকারিভাবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন করেই প্রস্তুত থাকতে হবে। উজানের পানির বেগ জানান দিচ্ছে, যেকোনো সময়েই বিপদ আসন্ন। ইতোমধ্যে পদ্মার পানি নির্ধারিত বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
এদিকে পাবনার বাংলাবাজার লঞ্চঘাট, সুজানগরের নাজিরগঞ্জ, চলনবিল, বড়াল, গোমতী, চিকনাইসহ ছোটখাটো বিলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া কয়েক দিনের টানা বর্ষণের ফলে পানির পরিমাণও বেশি হয়েছে এমন দাবি স্থানীয়দের।