বিএনপির মেয়রের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ

সারাদেশ ডেস্ক

তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান
তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজান

রাজশাহীর তানোর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

গত চার বছরের দুর্নীতির একটি খতিয়ান তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ পাঠিয়েছেন পৌরসভার ছয় কাউন্সিলর।

universel cardiac hospital

এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরে।

এ ছাড়া পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ও কার্যসহকারী মাহাবুব আলমকেও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মোমেনা আহমেদ, পলি বেগম ও জুলেখা বেগম। এ ছাড়া ১ নন্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাছির উদ্দিন, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মশিউর রহমান ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর উজ্জল হোসেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান মিজান তানোর পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর পৌর কার্যালয়ে শুরু হয় লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতি।

অভিযোগে বলা হয়, অলিখিত রেজুলেশন খাতায় প্রতি মাসে কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে ওই স্বাক্ষর দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন করে প্রকল্পের টাকা ও রাজস্ব তহবিলের অর্থ তসরুফ করেন মেয়র।

এ ছাড়া সরকারি বরাদ্দের অর্থ ইচ্ছামতো বিভিন্ন প্রকল্পের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন মেয়র।

এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, পৌর এলাকার কালীগঞ্জহাট থেকে তালন্দহাট পর্যন্ত রাস্তার পাশে গাছে চুন ও রঙ করার নামে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

বিভিন্ন ওয়ার্ডে রিং পাইপ সরবরাহের নামে ১১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এ ছাড়া ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন অর্থবছরে রাজস্ব ও সরকারি বরাদ্দ এডিপি ফান্ডের এক কোটি ৫০ লাখ টাকার কোনো কাজ ছাড়াই বরাদ্দের টাকা মেয়র তসরুফ করেন।

চার বছর ধরে পৌরসভার নিজস্ব রোলার গোপনে ঠিকাদারদের কাছে ভাড়া দিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মেয়র। কিন্তু এসব টাকা পৌর অ্যাকাউন্টে জমা না করে মেয়র নিজে আত্মসাৎ করেন।

অন্যদিকে গোল্লাপাড়াহাটের মাছপট্টির টিনশেডের কয়েকটি টিন পরিবর্তন করে ১১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। উপজেলার মাসিন্দা এলাকার তামান্না কোল্ডস্টোর নির্মাণের সময় তানোর-রাজশাহী সড়কের কালীগঞ্জ মোড়ের ভাঙা রাস্তার গর্তে স্টোর কর্তৃপক্ষ চার ট্রলি ইটের ভাংড়ি দিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করেন।

অথচ ওই রাস্তা সংস্কার দেখিয়ে তানোর পৌর মেয়র এডিপি ও টিআর প্রকল্পে বরাদ্দ দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

সেই সঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানির পাম্প স্থাপনে প্রকৃত খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু প্রত্যেক পানির পাম্প স্থাপনে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা তসরুফ করেন মেয়র।

অন্যদিকে জলবায়ু পরিকর্তন প্রকল্পের নামে ১২ কোটি টাকার মধ্যে গোপনে ৭ কোটি টাকার কাজ টেন্ডার দিয়ে অর্থ লোপাটের মহোৎসব চলছে। এসব কাজের ব্যাপারে মেয়র কাউন্সিলরদের সঙ্গে পরামর্শ ও সমন্বয় মিটিং করেননি। মেয়র তার ইচ্ছামতো পৌরসভার কাজের নামে অর্থ তসরুফ করেছেন।

কাউন্সিলদের অভিযোগে আরও বলা হয়, বর্তমানে তানোর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজান দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মনোনয়ন নিয়ে মাত্র ১৩ ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি তানোর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গত চার বছরে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি করেছেন। নিয়মিত তিনি পৌরসভায় বসেন না।

এ বিষয়ে তানোর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মোমেনা আহম্মেদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই মেয়র নামমাত্র প্রকল্প দেখিয়ে পৌরসভার অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পে সরকারিভাবে তানোর পৌরসভায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে সাত কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে একটি পত্রিকায় ও ইন্টারনেটে টেন্ডার দিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়েছেন তিনি। তার নিজস্ব জনৈক এক ঠিকাদারকে নামমাত্র কাজ করে জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পের অর্থ তসরুফ করছেন মেয়র।

এসব অর্থ তসরুফে তানোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী দায়িত্বপ্রাপ্ত পৌরসচিব জাহাঙ্গীর আলম ও কার্যসহকারী মাহবুব আলম পরস্পর যোগসাজশে গত চার বছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন অভিযোগ করে এই কাউন্সিলর।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তানোর পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম কোনো তথ্য দেয়া যাবে না জানিয়ে তিনি মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তানোর পৌর মেয়র মিজানুর রহমান মিজান তদন্ত করতে হবে জানিয়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে