শিল্পী সমিতি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে : রিয়াজ

বিনোদন প্রতিবেদক

চিত্রনায়ক রিয়াজ

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেছেন, পুরনো কমিটির এজিএম সেখানে নতুন নির্বাচনে যারা অংশ নেবে তাদের নিয়ে মঞ্চ সাজানো হয়েছে। তাদের হাইলাইট করা হচ্ছে। শিল্পী সমিতি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। অনেকদিন ধরেই এই ষড়যন্ত্র টের পাচ্ছি। সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। আমি তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানাই যারা আমার হয়ে আজ প্রতিবাদ করেছেন।

আজ শুক্রবার মিশা-জায়েদের ‘বিতর্কিত’ এজিএম থেকে রাগে ও ক্ষোভে ওয়াক আউট করে তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

এদিকে ক্ষমতার দুই বছর পার হয়ে গেলেও বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম অনুষ্ঠিত হয়নি নিয়ম মেনে। সমিতির নির্বাচিতদের কাছ থেকে এ বিষয়ে গত বছর জানতে চাওয়া হলে ইশারা-ইঙ্গিতে তারা প্রশ্ন তুলেছিলেন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনাগ্রহের প্রতি। কোনো এক কারণে এজিএমে আগ্রহ দেখাননি তারা৷ এ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে চাপা ক্ষোভও ছিল।

শুক্রবার এজিএমের ডাক দেন শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাব চত্বরে কমিটির চল্লিশ ভাগ সদস্যই আজ উপস্থিত ছিলেন না।

জানা গেছে, মিশা, জায়েদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি রিয়াজ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অঞ্জনা, নাসরিন, জেসমিনসহ আরও কয়েকজন। তবে এজিএমে উপস্থিত ছিলেন প্রায় দুই শতাধিক সাধারণ সদস্য।

আজকের এজিএমে বেশকিছু বিষয় নিয়ে হট্টগোল বাঁধে। এর মধ্যে সহ-সভাপতি রিয়াজসহ অন্য সদস্যদের কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে রাগে ও ক্ষোভে এজিএম থেকে ওয়াক আউট করে চলে যান চিত্রনায়ক রিয়াজ। এ সময় উপস্থিত সদস্যরা রিয়াজের পক্ষে কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।

চিত্রনায়ক রিয়াজ কথা বলার জন্য প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কিন্তু তাকে কথা বলতে দেয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে রিয়াজ বলেন, ‘আসলে আজ যা হলো, সমিতিতে যা হচ্ছে তা নিয়ে বলার ভাষা নেই। কেমন একটা একনায়কতন্ত্রভাব। সবকিছুতে সভাপতি আর সেক্রেটারিই যেন মুখ্য! সব অর্জন কী তাদের দুজনের? তারা দুজন কি একা একা জয়ী হতে পারতেন বা দুটা বছর একাই চলতে পারতেন?’

যদি তা-ই হবে তাহলে ঘটা করে ২১টি পদের নির্বাচনের কী দরকার? এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এজিএম করার কথা প্রতি বছর। সেটা হয়নি। দুই বছর শেষে হচ্ছে, সেখানেও যদি কথা বলার সুযোগ না থাকে তাহলে তো মেনে নেয়া যায় না। সভাপতি আর সেক্রেটারির বাইরে এজিএমে আর কোনো পদের লোক কথা বলতে পারবেন না, এমন গঠনতন্ত্রের কথা আমার জানা নেই। তারা কেন ভয় পাচ্ছেন? কীসের এত ভয়? কেন অন্যের কণ্ঠরোধ করতে চান? আমরা তো শিল্পী সমিতিতে গণতন্ত্র ও সুন্দর কিছু চর্চার জন্যই এক হয়েছিলাম। তাহলে এত রাজনীতি কেন সবকিছু নিয়ে?’

রিয়াজ আরও বলেন, ‘কমিটির কোষাধ্যক্ষ যে আয়-ব্যয়ের হিসাব দিয়েছেন, তা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। দুই বছরে অনুদান হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সংগ্রহ করেছে ৫৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৬ টাকা। শিল্পীদের জন্য খরচ হয়েছে দুই লাখ ৯১ হাজার ৩০০ টাকা। বাকি টাকা কেন ফান্ডে ফেলে রাখা হয়েছে? তাছাড়া ভোটার তালিকা নিয়েও কথা বলার ছিল। নতুন ভোটার তালিকায় অনেককে বাদ দেয়া হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন ছাড়া চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা যায় না। কমিটির কয়েকজন সদস্য প্রভাব খাটিয়ে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছেন। এসব অনিয়মের ব্যাপারে সভায় কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা সুযোগ দেয়নি। আজকের এজিএমটা রাজনৈতিক ভাবনায় পরিকল্পিত। এটা সব সদস্যই বুঝতে পেরেছেন।’

এ বিষয়ে মিশা সওদাগর বলেন, ‘এজিএম হলো যারা কমিটিতে থাকে তাদের দায়-দায়িত্ব নিয়ে কৈফিয়তের অনুষ্ঠান। সাধারণ সদস্যদের কাছে এদিন কমিটি জবাবদিহি করবে। সভাপতি ও সেক্রেটারি সব প্রশ্ন বা অভিযোগের উত্তর দেবেন। এখানে সবার কথা বলার কিছু নেই৷ এমন কোনো নিয়মও নেই৷’

কিন্তু সহ-সভাপতি হিসেবে রিয়াজ কথা বললে কী এমন ক্ষতি হতো- এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মিশা সওদাগর।

তিনি বলেন, ‘আজকের এজিএম নিয়ে অনেক পজিটিভ কথা বলার আছে। আমরা প্রথা ভেঙ্গে কমিটির লোককে হাইলাইট না করে আমাদের যারা সিনিয়র তাদের সামনে বসতে দিয়েছি। এজিএমের স্বাগত বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিয়েছি নির্বাচনে সভাপতিপ্রার্থী প্রিয়দর্শিনী মৌসুমীকে। তিনি এই সম্মান পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন। এছাড়া আজ প্রায় তিন শতাধিক সদস্য হাজির করেছি। আমরা প্রথম এজিএম করতে পারিনি সেজন্য সবার কাছে হাতজোড় ক্ষমা চেয়েছি। এত সব ভালো বিষয় রেখে একটা মন্দ দিক তুলে ধরার কিছু দেখছি না।’

এই অভিনেতার দাবি, সিনেমায় এখন সবদিক থেকেই ভালো সময়ের আগমন ঘটছে। এখন মন্দ বা ত্রুটি না খুঁজে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

এদিকে অনেক সদস্যই বলাবলি করেন, এজিএমের আড়ালে আজ মূলত মিশা-জায়েদ প্যানেলের নির্বাচনী প্রচারণাই চালানো হয়েছে। মঞ্চে মিশা-জায়েদের প্যানেলের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য হুট করে এ আয়োজন। তবে এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মিশা বলেন, ‘এটা ভিত্তিহীন।’

২০১৭ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান। গত দুই বছর ভালো-মন্দেই কেটেছে তাদের। আসন্ন ২৫ অক্টোবর নির্বাচনেও মিশা-জায়েদ এক হয়ে প্যানেল দিয়েছেন। তবে এবারের প্যানেলে নেই আগেরবারের সত্তর ভাগ সদস্য।

জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নানা বিতর্কিত আচরণে বিরক্ত হয়ে তারা এবার মিশা-জায়েদের প্যানেল থেকে সরে গেছেন। অন্যদিকে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে মৌসুমী ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে ইলিয়াস কোবরা মনোনয়ন কিনেছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে