তাহলে রাজনীতি এখন কাদের হাতে

ড. সা’দত হুসাইন

ড. সা’দত হুসাইন
ড. সা’দত হুসাইন। ফাইল ছবি

অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন, ‘রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতে নেই।’ এ রকম কথা আজকাল অনেকেই বলেন। এমন বক্তব্যের সত্যাসত্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সে বিষয়ে পরে আসছি। তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যকে হালকা করে দেখা যায় না। তিনি আবাল্য রাজনৈতিককর্মী, রাজনীতিবিদ। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে হল-হোস্টেল, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি এর একাডেমিক বিভাগ সর্বত্র তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সর্বশেষে ডাকুসর ভিপি হিসেবে এক অর্থে সারা দেশের ছাত্রসমাজের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছাত্রজীবনে নির্বাচনের মাধ্যমে খুব কম ব্যক্তি তাঁর সমতুল্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন।

ছাত্রজীবনের শেষে অতি অল্প বয়সে তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আরো তিন সহ-রাজনীতিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান এবং আব্দুর রাজ্জাকসহ সুউচ্চ মর্যাদায় বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (বিএলএফ) শীর্ষ সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়) নিযুক্ত হয়েছিলেন; ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। এরপর রাজবন্দি হিসেবে অনেক বছর জেল খেটেছেন। আওয়ামী লীগ পুনর্জীবিত হলে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রবিন্দুতে অর্থাৎ নীতিনির্ধারণী ফোরামে অবস্থান নেন।

universel cardiac hospital

অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি নির্বাচিত এমপি হিসেবে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভায় (ঐকমত্যের সরকার) শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। পরে অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আলাদা মন্ত্রী দেওয়া হলে তিনি শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে কারাভোগ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হলেও প্রথম দিকে মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। অবশ্য কয়েক বছর পর তাঁকে শিল্পমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন এবং শিল্পমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। তবে ২০০৯-এর পর থেকে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরাম অর্থাৎ প্রেসিডিয়ামের বাইরে রয়েছেন। তিনি উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে তাঁর অন্তর্ভুক্তির বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জনাব আহমেদ এমপি হয়েছেন, তবে আওয়ামী লীগের এবারের মন্ত্রিসভায় তিনি নেই।

এমন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী তোফায়েল আহমেদ যখন বলেন, রাজনীতি এখন রাজনীবিদদের হাতে নেই, তখন সে বক্তব্য আমাদের মধ্যে যুগপৎ উদ্বেগ এবং কৌতূহলের জন্ম দেয়। বহিরাগত অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে রাজনীতি চলে যাওয়ার মানে হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধিরা ক্ষমতার বলয় থেকে ছিটকে পড়া। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলতে আমরা তাঁদের বুঝি, যাঁরা গণমানুষের সম্মতিতে বা ইচ্ছায় সামাজিক মর্যাদায় সমাসীন হন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বা ক্ষমতায় থাকার জন্য নিয়মিত বিরতিতে ভোটার তথা জনতার রায় পাওয়ার জন্য তাঁদের কাছে যেতে হয়। ভোটাররা নানা দাবি নিয়ে, নানা চাহিদা নিয়ে তাঁদের কাছে উপস্থিত হন। রাজনীতিবিদ তাঁদের কথা শোনেন, তাঁদের চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করেন। আপনজনের মর্যাদায় তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন, তাঁদের আবেগ-অনুভূতির মূল্য দেন। এককথায় এলাকার মানুষের ইচ্ছা এবং শ্রদ্ধা-ভালোবাসাকে তাঁরা মর্যাদা ও ক্ষমতার উৎস মনে করেন।

পক্ষান্তরে অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা গণমানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আবেগ-অনুভূতি, চাহিদা-সন্তুষ্টিকে মূল্য দেন না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিভিন্ন স্তরে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তাঁরা ভিন্ন কৌশল, ভিন্নপথ অবলম্বন করেন। পেশিশক্তি, যান্ত্রিকশক্তি, অর্থবিত্ত কিংবা অন্য কোনো শক্তি ব্যবহার করে তাঁরা প্রথমে জনতাকে অবদমিত করেন। তারপর নিজেদের ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত সরাসরি নাগরিক সাধারণের ওপর চাপিয়ে দেন। এভাবে ক্ষমতায় চেপে বসে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নিজ কিংবা গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থ করাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। প্রয়োজন বোধে জনগণকে বঞ্চিত করে, তাদের শোষণ করে দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করেন। জনগণ অর্ধাহারে-অনাহারে থাকলে তাঁদের কিছু আসে-যায় না। তাঁরা তাঁদের বিলাস-বৈভব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন। জনগণের ইচ্ছা ব্যতিরেকে অন্য কোনো শক্তি বলে বলীয়ান ক্ষমতাধর অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা জনগণের কল্যাণ বা তাঁদের সন্তুষ্টিকে আমলে নেন না। জনকল্যাণকে, জনগণের সুখ-দুঃখ, আবেগ-অনুভূতিকে তাঁরা বড়জোর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন।

১৯৯১ সাল থেকে মাঝে দুই বছর (২০০৭-০৮) বাদে ২৭ বছর রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন। এই পুরো সময়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির হাতে দেশের শাসনভার অর্পিত ছিল। এ দুটি দল হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন। এই দুই দলের শীর্ষে রয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাঁরা এ মর্যাদায় পৌঁছেছেন। একসময়ে ঘর-সংসার সামাল দিলেও তাঁদের কোনো রকমেই অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলা যাবে না। তাঁরা রন্ধ্রে রুন্ধ্রে রাজনীতিবিদ, ইংরেজিতে যাকে বলা যায় (Holistically Politician)। দেশের শাসন ও দলের রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। তৃতীয়, চতুর্থ রাজনৈতিক দল হচ্ছে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বেও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রয়েছেন রাজনীতিবিদ। জাতীয় পার্টির শীর্ষ স্তরের সবাই যে নিখাদ রাজনীতিবিদ এমনটি হয়তো বলা যাবে না। তবে এর বেশির ভাগ নীতিনির্ধারক যে রাজনীতিবিদ এমনটি সহজে বলা যায়। বামঘেঁষা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সবাই রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক ধারায় লালিত।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রবিন্দু এবং অন্তর্বলয়ে (Inner Circle) এখনো রাজনীতিবিদরা অবস্থান করছেন। তবে রাজনীতি তথা ক্ষমতার মধ্য ও বহির্বৃত্তে বহিরাগত অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা ঢুকে পড়েছেন। তাঁদের অস্তিত্ব ক্রমেই অধিকতর দৃশ্যমান হচ্ছে। সংসদে তাঁদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দেখে মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্পিকার থাকাকালে বলেছিলেন, সংসদ ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কবজায় চলে গেছে। মূল রাজনৈতিক দল এখনো পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনগুলোতে অরাজনৈতিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিরা ঢুকে পড়ছেন। আগে এ ধরনের লোকজন বহিরাঙ্গনে লোকচক্ষুর আড়ালে অবস্থান করলেও এখন তাঁরা পদ-পদবি বাগিয়ে অঙ্গসংগঠনগুলোয় তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি লক্ষণীয়ভাবে বাড়িয়ে তুলেছেন। এর আঁচ মূল দলেও ধীরে ধীরে অনুভূত হচ্ছে। জনাব আহমেদও হয়তো সে আঁচ অনুভব করেছেন এবং তাঁর বক্তব্যে সেদিকে ইঙ্গিত করেছেন। সে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এবং সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করলে তাঁর বক্তব্যকে অলীক বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অঙ্গসংগঠনগুলোয় অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডকে কঠিন দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে এর রাশ না টানলে ভবিষ্যতে মূল রাজনৈতিক দলেও তাঁদের উপস্থিতি এবং প্রভাব প্রকটভাবে বেড়ে যেতে পারে।

দুঃখজনক হচ্ছে, নিখাদ রাজনীতিবিদদের হাত ধরেই অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা অঙ্গসংগঠন, এমনকি মূল রাজনৈতিক দলেও ঢুকে পড়ে। অঙ্গসংগঠনগুলো দলে শীর্ষ ব্যক্তি এবং নীতিনির্ধারণী ফোরামের শাণিত দৃষ্টি ও সুকঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। থাকা বোধ হয় সম্ভবও হয় না। এ সুযোগে বহিরাগত সুযোগসন্ধানীরা এসব অঙ্গসংগঠনে অনুপ্রবেশ করার প্রচেষ্টা চালান। চাটুকারিতা ও অর্থের জোরে তাঁরা সফল হন। নেতারা সময় নিয়ে, সতর্ক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ-পর্যালোচনা করেন না। দল ও দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেন না। একদিকে অর্থের আর্কষণ, অন্যদিকে পরিচিত লোকজনকে খুশি করার প্রবণতা বশে তাঁরা এঁদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করে নেন। মূল দলের আপামর নীতিনির্ধারকরা পূর্ণ তথ্যের আলোকে সপ্রতিভ অবস্থানে থেকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত থাকেন না। থাকলেও বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দেন না। বিশাল দলেরও অঙ্গসংগঠনে কত লোকই তো যোগদান করেন। তাঁরা মনে করেন, বড় নেতাদের পক্ষে সে নিয়ে মাথা ঘামানো সম্ভব নয়, শোভনীয় নয়। অর্থবিত্ত, কৌশল-অপকৌশল, সাংগঠনিক তৎপরতা এবং সর্বোপরি তাঁবেদারি, মোসাহেবির বদৌলতে সংগঠনের নেতানেত্রীদের আস্থা, সমর্থন জোগাড় করে দুর্বৃত্ত শ্রেণির নবাগত সদস্যরা সংগঠনে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। পর্যায়ক্রমে তাঁরা সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে বসেন। এরপর শুরু হয় তাঁদের অর্থ-সম্পদ সংগ্রহের মূল কার্যক্রম। একদিকে তাঁদের অর্থ-সম্পদ বাড়ে, অন্যদিকে অঙ্গসংগঠন তো বটেই, মূল দলেও তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। মূল দলের অন্তর্বলয়ে পৌঁছাতে না পারলেও সেই বলয়ের সদস্যদের সহযোগিতা-সমর্থন নিয়ে তাঁরা অপ্রতিরোধ্যভাবে দুষ্কর্ম, দুর্বৃত্তপনা চালিয়ে যায়। দলের ত্যাগী নিবেদিতপ্রাণ নিরীহ সদস্যরা পিছু হটতে শুরু করেন। একসময় তাঁরা চুপসে যান।

অঙ্গসংগঠন অথবা মূল দলে একবার জেঁকে বসতে পারলে বহিরাগত দুর্বৃত্তরা অন্যায় আয়-উপার্জন এবং সম্পদ আহরণের অনৈতিক খেলায় মেতে ওঠে। এ কাজের সহযোগী হিসেবে তারা স্বভাবজাত দুষ্কৃতকারীদের দলে ভেড়ায়। অন্যায়, অপকর্ম, অপরাধে জড়িয়ে এরা শুধু দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, সমাজকেও অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেয়। অস্বচ্ছ অর্থবিত্ত, অপরাধপ্রবণ অনুগত বাহিনী এবং দুর্নীতিবাজ পদস্থ ব্যক্তিদের সহায়তায় এরা নিরীহ নাগরিকদের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়ে দেয়। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, জনপদ উচ্ছন্নে যায়। নিখাদ রাজনীতিবিদরা সেই মুহূর্তে অনেকটা অসহায়। নিচু ঢালে গড়িয়ে পড়া সংগঠনকে টেনে তোলা তখন দুঃসাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়ায়।

নিখাদ রাজনীতিবিদদের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে, যা শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিক পর্যায়ে তুষ্ট করার পক্ষে কাজ করে না। যেমন—আত্মমর্যাদাবোধ। ব্যক্তিক পর্যায়ে অনেক নেতানেত্রী তাঁবেদারি, মোসাহেবি, এমনকি সাষ্টাঙ্গ প্রণাম পছন্দ করেন। দুর্বৃত্ত শ্রেণির বহিরাগত সুযোগসন্ধানীরা সুযোগ পেলেই যেভাবে পায়ে ধরে সালাম দিতে পারে, একজন ত্যাগী এবং নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ তেমনভাবে কপট আনুগত্য প্রদর্শন করতে পারেন না। এটি তাঁর আত্মমর্যাদায় বাধে। অকপটে বক্তব্য এবং সঠিক সৌজন্যের মাধ্যমে তিনি নেতাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। অরাজনৈতিক বহিরাগত সুযোগসন্ধানী, সত্য-মিথ্যা বক্তব্য কাঁচমাচু ভঙ্গিতে উপস্থাপন করে ব্যক্তিকপর্যায়ে দু-একজন শীর্ষ নেতানেত্রীর এত কাছে চলে যায় যে নিখাদ রাজনীতিবিদকে বাদ দিয়ে নেতানেত্রীরা তাকেই বিশ্বস্ত ভাবতে শুরু করেন, অযৌক্তিকভাবে তাকেই সমর্থন করেন। অঙ্গসংগঠনের পরিসীমা ডিঙিয়ে আড়ালে-আবডালে সুযোগসন্ধানী অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা মূল দলে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। তাদের অদৃষ্ট দাপটে নীতিবান, নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদরা ছিটকে পড়েন। এ যেন Bad money drives out good money-এর বাস্তব দৃষ্টান্ত।

রাজনৈতিক সংগঠন থেকে কিছুটা দূরে আমাদের অবস্থান বিধায় বহিরাগত দুর্বৃত্তদের প্রভাব ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। যাঁদের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্তি এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের পদ্ধতি প্রক্রিয়া সম্পর্কে দীর্ঘ সময়ের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁদের কাছে নবাগত সুযোগসন্ধানীদের কার্যাবলি সম্পর্কে বিশদ তথ্য রয়েছে। রাজনৈতিক দলের সংহতি, নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার স্বার্থে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের অনুভূতি-উপলব্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে লাগসই ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দল উপকৃত হবে। আসলে অন্য সব সেক্টরের মতো রাজনীতিতেও অভিজ্ঞতা এবং সতর্কতার বিকল্প নেই।

লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে