রাজনীতির মাঠে যেভাবে সম্রাটের উত্থান

ডেস্ক রিপোর্ট

ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট
ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ফাইল ছবি

১৯৯০ সালে রাজনীতির জীবন শুরু। সেই সময় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট। সারাদেশে এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলছিল। সম্রাট রমনা অঞ্চলে আন্দোলনের সংগঠকের দায়িত্বে ছিলেন। এ কারণে তখন নির্যাতনসহ জেলও খাটতে হয় তাকে। এরপর থেকেই ‘সম্রাট’ খ্যাতি পান সাহসী সম্রাট।

রোববার ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

universel cardiac hospital

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের জন্ম ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব সাহেবনগর গ্রামে।

১৯৯১ সালে ছাত্রলীগে থাকা অবস্থায় এরশাদের পতনের পর ক্ষমতায় আসে বিএনপি সরকার। সে আমলে সম্রাটের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ১/১১-এর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সময় সম্রাট যুবলীগের প্রথমসারির নেতা ছিলেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসে। এরপর থেকেই রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান হতে থাকেন সম্রাট। দলীয়ভাবে পদোন্নতিও হয় তার। আওয়ামী লীগের বড় বড় অনুষ্ঠানে পরিচিত মুখ হিসেবে উপস্থিত থাকতেন।

সম্প্রতি ক্যাসিনো চালানো, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ সব অভিযোগের তীর এখন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের দিকে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি রাজধানীর মতিঝিলসহ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার সরকারি দফতর, ক্লাবসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হন দক্ষিণ যুবলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। চার মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ব্যবসায় খালেদের ‘গুরু’ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে সম্রাটের।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত খবরে সম্রাটকে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে উল্লেখও করা হয়েছে। সম্রাটের ইশারায় ঢাকার বেশকয়েকটি ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চলে। সেখান থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করেন তার সহযোগীরা। এ কাজ চালিয়ে যেতে প্রভাবশালীদের টাকা দিতেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে, সম্রাট একজন পেশাদার জুয়াড়ি এবং এ কারণে সিঙ্গাপুরে যাতায়াত আছে তার। মাসের এক-তৃতীয়াংশ সময় জুয়া খেলতে সিঙ্গাপুরে কাটান তিনি। সেখানের মারিনা বে স্যান্ডস ক্যাসিনোতে সম্রাট একজন বিশিষ্ট জুয়াড়ি বলে জানা গেছে। সিঙ্গাপুরে গেলে বিমানবন্দর থেকে তাকে বিলাসবহুল লিমুজিন গাড়িতে করে ওই ক্যাসিনোতে নিয়ে যাওয়া হয়। সিঙ্গাপুর সফরের সময় আরমানুল হক ও মোমিনুল হক মোমিনসহ যুবলীগের একাধিক নেতা সম্রাটকে সঙ্গ দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

র‌্যাবের অভিযানে সম্রাটের সঙ্গে আরমানুল হককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাব জানায়, ফেনী ভ্রমণের সময় সম্রাটের সফরসঙ্গী হিসেবে থাকেন আরমানুল হক আরমান। তিনিও ফেনী থেকে উঠে এসেছেন। সম্রাটের আর্থিক লেনদেনগুলো করে থাকেন আরমান। ঠিকাদার হিসেবেও আরমানের পরিচিতি রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্পে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দিতে সম্রাট তাকে সহযোগিতা করেন বলেও জানা গেছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে