সম্রাট-আরমান গ্রেফতারে সিনেমাপাড়ায় আতঙ্ক!

বিনোদন প্রতিবেদক

আরমান-সম্রাট
আরমান-সম্রাট। ফাইল ছবি

ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে আজ রোববার গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। আর এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে চলচ্চিত্রপাড়ায়।

কেন? কারণটা হলো দুজনই সাম্প্রতিককালে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন প্রযোজক হিসেবে। প্রথমদিকে বেনামে অর্থলগ্নি করলেও চলতি বছর ‘দেশবাংলা মাল্টিমিডিয়া’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। যার কর্ণধার হিসেবে প্রকাশ্যে থাকেন আরমান। তবে এর মূল মালিক হিসেবে সম্রাটের নামই শোনা গেছে।

universel cardiac hospital

সম্প্রতি মন্ত্রী-এমপি অতিথি করে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে প্রতিষ্ঠানটি জমকালো আয়োজনে ‘আগুন’ নামে একটি ছবির মহরত করে। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত এই ছবির নায়ক শাকিব খান ও নায়িকা নবাগতা জাহরা মিতু।

এর আগে গত কোরবানি ঈদে মুক্তি পেয়েছে তাদের প্রথম সিনেমা ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’। জাকির হোসেন রাজু নির্মিত ছবিটিতে শাকিব খান ও বুবলী জুটি হয়ে পর্দায় হাজির হন। ছবিটি দারুণভাবে ব্যর্থ হয়। লোকসানের মুখ দেখে।

তবুও সিনেমা নির্মাণের উদ্যম কমেনি দেশবাংলার। বেশ ঘটা করেই আরও কিছু নতুন ছবির ঘোষণা দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যানারে। চিত্রনায়ক শাকিব খানকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা করার ঘোষণাও দেন দেশবাংলার মালিক আরমান। কিন্তু তার আগেই থেমে গেল নিজেদের রাজকীয় জীবনের রথ। ‘আগুন’ ছবির শুটিং শুরু হলেও সেটি এখন অনিশ্চয়তার হুমকিতে। অনিশ্চয়তায় পড়েছে দেশবাংলার কার্যক্রমও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিনেমাপাড়া নিয়ে ফ্যান্টাসি ছিলে সম্রাটের মধ্যে। তিনি সিনেমার মানুষদের সাথে মিশতে পছন্দ করতেন। অনেকেই সম্রাট ও তার সহযোগীদের টাকায় নিজেদের প্রভাবশালী প্রযোজক হিসেবে সিনেমাপাড়ায় পরিচিত করে তুলেছেন।

ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ এক নায়কও নিজের নামে সেই সব টাকা সিনেমায় লগ্নি করে ক্রান্তিলগ্নের প্রযোজক হিসেবে বাহবা কুড়িয়েছেন। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে থাকতেন আরও দু-একজন প্রযোজক।

সেই টাকা আসতো কাকরাইলে সম্রাটের কার্যালয় থেকে। প্রথমদিকে এসব টাকার জোগানদাতা হিসেবে শোনা যেত ক্যাসিনোকাণ্ডে আটক হওয়া যুবলীগ নেতা খালেদের নাম। তিনি বেনামে সিনেমায় টাকা লগ্নি করতেন বলে শোনা যায়। দেশের সেরা তারকাদের অনেক ছবিতেই তার অর্থ বিনিয়োগের খবর চলচ্চিত্রপাড়ায় উড়ে বেড়ায়।

জানা যায়, সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায় এসব ছবিতে টাকা ঢেলে কালো টাকা সাদা করার পাশাপাশি সিনেমার উঠতি নায়িকাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন খালেদ।

মূলত খালেদের পরামর্শ ও আগ্রহেই পরবর্তী সময়ে সিনেমার দিকে অধিক মনোযোগী হন সম্রাট। শোনা যায়, তার ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত আরমানের মাধ্যমে বেনামে সিনেমায় টাকা লগ্নি করতেন তিনি।

সেই সুবাদে চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অনেক নামি দামি নায়ক-পরিচালক তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতেন সিনেমার টাকার জন্য। দু-একজন প্রথম সারির নায়িকার সঙ্গেও বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার, এমন গুঞ্জন ছড়িয়েছে বহুবার।

নানাজনের আবদার রক্ষার্থে মাঝে মধ্যে বাইকে চড়া শতাধিক কর্মী নিয়ে এফডিসিতে শোডাউন করতেন তিনি। কারও কোনো দরকার হলেই ছুটে যেতেন সম্রাটের দরবারে। চলচ্চিত্রের নানা বিচার-সালিশেও প্রভাব ছিল তার।

চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বেশকিছু শীর্ষস্থানীয় সমিতির ক্ষমতায় কে বসবে না বসবেও সেগুলোও নিজের অফিসে বসে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেন সম্রাট। চলচ্চিত্রের অনেক নেতাকর্মীকে দেখা গেছে সম্রাটের অফিসে গিয়ে ফুল দিতে। অনেকটা যেন এফডিসিরও অঘোষিত সম্রাট হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

খালেদের পর এবার সেই সম্রাট ও তার অন্যতম সহযোগী আরমান গ্রেফতার হওয়ায় আতঙ্কিত চলচ্চিত্রপাড়ার অনেকেই। সেই সঙ্গে বিপদে পড়েছেন সেই সব প্রযোজক, যারা সম্রাট-আরমানের টাকায় নিজেদের প্রযোজক হিসেবে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে