আবরার হত্যা: খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক

সম্পাদকীয়

আবরার ফাহাদ
নিহত আবরার ফাহাদ। ছবি : ফেসবুক

কিছু কিছু ঘটনা আমাদেরকে নিস্তব্দ করে দেয়। সেইসঙ্গে রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনে। আজ সোমবার তেমনি একটি ঘটনার জন্ম হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের বিদ্যাপীঠ হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কিছু পথভ্রষ্ট ছাত্রনেতা কর্তৃক আবরার ফাহাদ নামক মেধাবী শিক্ষার্থী হত্যার মাধ্যমে। তার মৃত্যুর নির্মম সংবাদটি সারাদেশের মানুষের হৃদয়কে মর্মাহত করেছে। যা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

আবরারের ফেসবুক আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গেছে তার দেহে আঘাতের বহু চিহ্ন। ময়নাতদন্তে তার দেহে জখমের অনেক চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। আমাদের কথা হলো একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিক নিজস্ব মতামত প্রকাশের অধিকার রাখে। তবে তার মতামত যদি রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল হয় এর বিচারের জন্য আইন আদালত আছে; একটি খুড়া অজুহাতে একজনের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারোরই নেই।

universel cardiac hospital

তাছাড়া বুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটু ভিন্ন চোখেই দেখে দেশের মানুষ। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভাগ্যেই জোটে বুয়েটে অধ্যয়নের সুযোগ। তারা শুধু দেশ নয়, বিশ্বের সম্পদ। সৃষ্টি আর আবিষ্কারের নেশা তাদের মগজে-মননে। তারা আলোকিত করে দেশকে, দেশের মানুষকে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কর্তৃক এমন একটি লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের খবর দেশবাসীকে হতবাক করেছে।

সারাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে ক্যাসিনো ও দুর্নীতি দমনে জোরালো অভিযান চলছে। অনেক রতি-মহারতিরা ধরা পড়ছে সেসব অভিযানে। সরকারের এমন অভিযানে সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে। আর এমন সময়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কতিপয় বিপথগামী সদস্য কর্তৃক আবরার ফাহাদকে নিজের হলে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছে বলে আমরা মনে করি। ভিন্নমত দমনের নামে একজন মানুষকে হত্যা করা মানসিক বিকৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। এসব বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারপূর্বক তাদেরকে শিগগির আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছি।

জানা গেছে, এই হত্যার দায়ে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আবরারে বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ইতোমধ্যে নয়জন ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমরা মনে করি আবরারের খুনের বিচার করতে শেখ হাসিনা সরকারের শতভাগ আন্তরিকতা আছে এবং বাকী আসামীরাও দ্রুত সময়ের মধ্যেই গ্রেফতার হবে।  

আমাদের দাবি, খুনীদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে যেন দলীয় বিবেচনা না আসে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে