ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

আদালত প্রতিবেদক

ইউনূস
ফাইল ছবি

প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করায় চাকরিচ্যুতের অভিযোগে দায়ের করা তিন মামলায় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

আজ বুধবার ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান রহিবুল ইসলাম এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

এদিন তিন মামলায় ড. ইউনূসের সমনের জবাব দেওয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তিনি আদালতে উপস্থিত হননি।

তার পক্ষ হয়ে আইনজীবী রাজু আহম্মেদ আদালতকে বলেন, ড. ইউনূস সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি ব্যবসার কাজে বিদেশ অবস্থান করছেন। দেশে এলে আদালতে উপস্থিত হবেন। যদিও তিনি বিদেশে থাকায় আমাকে পাওয়ার দেননি তবুও আপনার কাছে অনুরোধ করছি তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না করার জন্য।

মামলার বাদী প্রস্তাবিত গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন গঠন করায় চাকরিচ্যুত হওয়ায় আমরা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করি। তিনি আজ আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন সুলতানা ও উপ-মহাব্যবস্থাপক খন্দকার আবু আবেদীন আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

আদালতের পেশকার নুরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ৩ জুলাই ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের সদ্য চাকরিচ্যুত সাবেক তিন কর্মচারী। আদালত ৮ অক্টোবর তাদের হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন। অপর দুজন হলেন- ড. ইউনূস ছাড়াও একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন সুলতানা ও উপ-মহাব্যবস্থাপক খন্দকার আবু আবেদীন।

যারা মামলা করেছেন

১. আব্দুস সালাম, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার চড়াইকোল গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তিনি প্রস্তাবিত গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ২০০৫ সালের ২৭ জুন গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে স্থায়ী পদে জুনিয়র এমআইএস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে যোগদান করেন তিনি।

২. শাহ আলম, নীলফামারী জেলার এলাহী মসজিদপাড়ার নজরুল ইসলামের ছেলে। প্রস্তাবিত গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক তিনি। ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে স্থায়ী পদে জুনিয়র এমআইএস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে যোগদান করেন।

৩. এমরানুল হক, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানার নারিকেলতলা গ্রামের সফর আলীর ছেলে। তিনি প্রস্তাবিত গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্য। তিনি ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে স্থায়ী পদে জুনিয়র এমআইএস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে যোগদান করেন।

যে অভিযোগে মামলা

মামলার বাদীরা গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে স্থায়ী পদে এমআইএস অফিসার (কম্পিউটার অপারেটর) হিসেবে কাজে যোগদান করেন। শ্রমিক হিসেবে নিজেদের সংগঠিত হওয়া ও নিজেদের কল্যাণের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সে অনুযায়ী নিজেরা অন্যান্য শ্রমিক সহকর্মীর সঙ্গে নিয়ে ‘গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ (প্রস্তাবিত) নামে একটি ইউনিয়ন গঠন করেন এবং তা আইন অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেন।

২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল ট্রেড ইউনিয়নটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য মহাপরিচালক ও রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়নে আবেদন করেন। ৯ জুন তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

মামলার বাদী আব্দুস সালাম প্রস্তাবিত ওই ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, শাহ আলম প্রচার সম্পাদক ও এমরানুল হক সদস্য। তাদের অভিযোগ, আসামিরা ইউনিয়নের বিষয় জানতে পারলে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকেন। স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনেও বাধা প্রদান করেন। এরূপ অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করায় প্রকাশ্যে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন আসামিরা।

আসামিদের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বেআইনিভাবে বাদীদের প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখেন এবং কোনো কারণ ছাড়াই তাদের চাকরি থেকে টার্মিনেট করেন।

বিষয়টি তারা লিখিতভাবে শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালকে অবগত করেন। পরে কাজের বিষয়ে বহুবার যোগাযোগ ও অনুনয়-বিনয় করলেও তাদের (বাদীদের) প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। শুধু ইউনিয়ন গঠন করার কারণে আসামিরা তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করে কাজ থেকে বিরত রাখেন এবং বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুত করেন।

ইউনিয়ন করার কারণে চাকরিচ্যুতির বিষয়টি সম্পূর্ণ বেআইনি বিধায় চলতি বছরের ২৩ জুন আসামি নাজনীন সুলতানা ও খন্দকার আবু আবেদীন বরাবর রেজিস্টার্ড ডাকযোগে তারা অনুযোগপত্র পাঠান।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা তাদের প্রতিষ্ঠানে ইউনিয়ন গঠনের কারণে বাদীদের বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৯৫ (ঘ) ধারা লঙ্ঘন এবং অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছে। বাদীরা শ্রমিক হিসেবে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩১৩ ধারার তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ও ইউনিয়ন গঠন এবং তার কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৩৯১ (১) ধারা মোতাবেক মামলা করতে বাধ্য হয়েছে।

সারাদেশে আইটি সেবা দেয় গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের কর্মীরা। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত (ISO 9001 : 2015) সার্টিফাইড, গ্রামীণ ব্যাংকের একমাত্র আইটি প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণ কমিউনিকেশন্স’। সারাদেশে ২৫৬টি তথ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র এ আইটি সেবা দিয়ে থাকে। গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সে ১ হাজার কর্মী রয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ কমিউনিকেশন্সের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের বেতন-ভাতাসহ বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হওয়ায় সবার মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কমিউনিকেশন কর্তৃপক্ষ বারবার মৌখিক আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি।

গত ১৬ এপ্রিল প্রায় ৫৫০ জন কর্মী সংগঠিত হয়ে ঢাকার শ্রম অধিদফতরের ট্রেড ইউনিয়নের শাখায়, ‘গ্রামীণ কমিউনিকেশন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন’ (প্রস্তাবিত)-এর আবেদন জমা দেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে