আবরার হত্যার বিচার দাবিতে বিএনপির মিছিল

মত ও পথ রিপোর্ট

রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল
আবরার হত্যার বিচার দাবিতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের পিটিয়ে হত্যা ও ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে এই বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

universel cardiac hospital

মিছিলটি রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

মিছিলে অংশ নেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, সাইফুর রহমান মিহির, কোষাধ্যক্ষ আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রেজাউর রহমান ফাহিম, দফতর সম্পাদক এ বি এম এ রাজ্জাক প্রমুখ।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান।

পথসভায় দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-বাংলাদেশের স্বার্থ শেখ হাসিনা বিক্রি করবে এটা হতে পারে না। তাহলে ভারত থেকে কি কি নিয়ে আসলেন ? জনগণ প্রত্যাশা করেছিল- ‘ভারতকে সারাজীবন মনে রাখার মত’ আপনার দেয়া ট্রানজিট, বানিজ্য, কানেক্টিভিটি, ৭ রাজ্যের নিরাপত্তা, নদী, সমুদ্র, বন্দর, সুন্দরবন, প্রতিরক্ষা, বৃহত্তম রেমিটেন্স, অবাধ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বিপরীতে আপনি প্রতিবারের মত এবারও হয়ত খালি হাতে ফিরবেন না।

তিনি বলেন, ‘সব প্রধানমন্ত্রীই বিদেশ সফরে কিছু না কিছু আনতে যায়। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে সবকিছু উজাড় করে দিয়ে আসেন। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেলেই দেশের মানুষের উদ্বেগ বেড়ে যায়। এবারও আপনি দেশের অনেক কিছু দিয়ে দিলেন, আর ফিরে আসলেন খালি হাতে’।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, আপনি বললেন দেশের স্বার্থ আপনি বিকিয়ে দেন না, তাহলে ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর কেন দিয়ে আসলেন ? গতকালের সংবাদ সম্মেলনে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারলেন না। বরং আমাদের বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের অধিকারও আছে বলে যে জাতীয় স্বার্থপরিপন্থী বক্তব্য রাখলেন, তাতে গোটা জাতি হতভম্ব হয়ে পড়েছে।

তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করতে না পারায় সরকার প্রধানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এবারও তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো চুক্তি হবে না। আপনি তিস্তার পানি চাইতেই পারলেন না, বরং ফেনী নদীর পানি দিয়ে আসলেন ভারতকে! আপনি এখন দাতা হাতেমতাই হয়ে বলছেন, ‘কেউ পানি চাইলে, তা যদি না দেই, সেটা কেমন দেখায় ?’ অথচ আপনি ভুলেই গেছেন, আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আপনার সাংবিধানিক দায়িত্ব নিজ দেশের মানুষের ন্যায্য পানির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। নিজেদের পানি চাহিবামাত্র বিনাস্বার্থে অন্যকে উজাড় করে দিয়ে আসা নয়! এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে আপনি ভারতকে চাপ দিতে পারেননি। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের বদলে দিয়ে এসেছে ফেনী নদীর পানি এবং গ্যাস। জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) বিষয়ে টু শব্দটি করেননি। যৌথ বিবৃতির কোথাও এটির উল্লেখ নেই। অথচ বাংলাদেশের মানুষ সেটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত হত্যা, বানিজ্য ঘাটতির মতো ইস্যুগুলো এজেন্ডার কোথাও স্থান পায়নি। যা বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট।

রিজভী বলেন, ভারতকে আমাদের উপকূলে নজরদারির জন্য ২০টি রাডার স্থাপনে অনুমতি দেয়া হলো। তাতে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের আঞ্চলিক সংঘাতের বলি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপনি স্বাধীন দেশের সমুদ্র বন্দর, ফেনী নদীর পানি, উপকুলে ভারতের নজরদারীর জন্য ২০টি রাডার স্থাপন এবং জ্বালানী সংকটের এই দেশে গ্যাস অন্য দেশের হাতে তুলে দেয়া হলো-তা সম্পূর্ণভাবে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি এবং সুষ্পষ্টভাবে সংবিধান লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, মূলত অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখল এবং সেই ক্ষমতা দীর্ঘ মেয়াদে ভোগ করার মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতেই ‘গণতন্ত্রের মা’ এদেশের গণমানুষের আস্থাভাজন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১০ মাস আগেই মিথ্যা ও সাজানো মামলায় জড়িয়ে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছে সরকার। আওয়ামী সরকার জানে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী রেখে তিলে তিলে নি:শেষ করতে পারলেই দেশ বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকাটা সহজ হবে, কিন্তুজনগণের ক্ষমতা সম্পর্কে এখনও তাদের হুঁশ হয়নি। এখন সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ প্রবল শক্তি নিয়ে রাস্তায় নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপরাধ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে জাতীয়তাবাদী শক্তি এখন আরও বেশী ঐক্যবদ্ধ।

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, আমি আবারও অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে