স্বাধীন ছাত্র রাজনীতি থাকতে পারে: ড. কামাল

মত ও পথ প্রতিবেদক

ড. কামাল হোসেন
ড. কামাল হোসেন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে তাতে পুরোপুরি একমত নন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি পরিহার করে স্বাধীন ছাত্র রাজনীতি থাকার পক্ষে মত দেন।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন ড. কামাল।

universel cardiac hospital

মত প্রকাশের জন্য বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি করে করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এটা সংবিধানের ওপর আঘাত।

বুয়েটছাত্র আবরারকে তার হলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল বুয়েটে শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবি তুলেছেন, যার একটি হল ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরাম সভাপতির সংবাদ সম্মেলনে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি আসে। এ বিষয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি আমরা কোনদিনই চাই না। তবে স্বাধীন ছাত্র রাজনীতি থাকতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধানে আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যেকেউ তার মতপ্রকাশ করতেই পারেন।’

আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীর হত্যায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেন ড. কামাল। বলেন, ‘তদন্ত করে সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটন করতে হবে। এটা কোনও দলীয় বক্তব্য নয়। ১৬ কোটি মানুষের একজন হিসেবে আমি এই দাবি জানাচ্ছি।’

আবরার হত্যাকাণ্ডে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় হতে পারে, সঙ্গে অন্যরাও থাকতে পারে।’

দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে আপনার দলের সংসদ সদস্য পদত্যাগ করবে কি না সংবাদ সম্মেলনে ড. কামালের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দুর্বৃত্তায়িত নেতা-কর্মী এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা আজ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের মতো আচরণ করছে। হলে হলে টর্চার সেল। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজের হোস্টেলগুলোতেও রয়েছে টর্চার সেল। টার্গেটে থাকা শিক্ষার্থীকে টর্চার করার আগে দেয়া হয় বিরোধী কোনও সংগঠনের তকমা। এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, রাজনৈতিক ভণ্ডামি ও কৌশলী প্রতারণা।’

তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেশ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। জনগণের মালিকানা জোরপূর্বক ছিনতাই করে ক্ষমতা দখলের কারণে আজ গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যেতে বসেছে। সুশাসন ও জবাবদিহিতা নেই। শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক ন্যূনতম ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ক্ষমতা যেখানে কেন্দ্রীভূত দুর্নীতির মহাউৎসব সেখানে দৃশ্যমান। বর্তমান ভিন্নমত দমন, মিথ্যা মামলা, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, সভা-সমাবেশ করতে দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা-নিষেধ, নিবর্তনমূলক আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরির মাধ্যমে সরকার প্রকাশ্যে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে।’

সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘এই ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় লুটপাট, ধর্ষণ, কালো টাকা, অর্থ পাচারকারীদের দৌরাত্ম প্রকট হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। সরকারি ছত্রছায়ায় গুটিকয়েক চক্র ব্যাংক লুট করছে, টেন্ডারবাজি করছে, আর্থিক ভাগাভাগি নিয়ে খুনখারাবি চালাচ্ছে। দেশে আজ ক্যাসিনো সংস্কৃতি চলছে। মানুষের জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই। সর্বত্রই চলছে অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং ব্যাপক দুর্নীতি।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে