আমার ছেলে হত্যাকারী নয়, পরিস্থিতির শিকার : ইফতির বাবা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

আদালতে ইফতি মোশাররফ সকাল
আদালতে ইফতি মোশাররফ সকাল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ৫ নম্বর আসামি রাজবাড়ীর ইফতির মোশাররফ সকাল (২১) এলাকায় নম্র ও ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত। তিনি রাজবাড়ী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ধুঞ্চি গ্রামের ২৮ কলোনী এলাকার ফকির মোশাররফ হোসেনের ছেলে। ফকির মোশাররফ শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালান।

এদিকে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকালের জড়িত থাকার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তার স্বজন ও এলাকাবাসী। ইফতি পড়ালেখা করেছেন রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। তার শিক্ষকদের কাছেও তিনি ভদ্র ও দারুণ মেধাবী ছেলে হিসেবে পরিচিত।

universel cardiac hospital

এছাড়াও এলাকায় ও থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইফতি মোশাররফ সকাল দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার ছোট ভাই রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষার্থী। সকাল রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন ঢাকার নটরডেম কলেজে। এরপর সেখান থেকে ভর্তি হন বুয়েটে। রাজবাড়ীতে থাকতে কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না তিনি। বুয়েটে ভর্তির পর ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। কমিটিতে ছাত্রলীগ বুয়েট শাখায় উপ সমাজসেবা সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।

ছাত্রলীগ নেতা ইফতির প্রতিবেশীরা বলেন, সকাল বাড়িতে থাকাকালীন সব সময় পড়াশোনা নিয়ে থাকতেন। কখনো কারো সঙ্গে মাথা উঁচু করে বা উচ্চ স্বরে কথা বলতে দেখা যায়নি তাকে। বিতর্ক, গনিত অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার মতো কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন তিনি। এসবে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে বেশকিছু পুরস্কারও পেয়েছেন। ফলে আবরার হত্যার সঙ্গে সকালের জড়িত থাকার কথা শুনে আশ্চর্য হয়েছেন তার প্রতিবেশীরা। সুষ্ঠু তদন্ত হলে সকাল নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে আশা তাদের।

ইফতির বাবা ফকির মোশাররফ হোসেন জানান, টেলিভিশনে সংবাদ দেখে জানতে পারেন তার ছেলে ইফতি আবরার হত্যায় জড়িত। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই এটি বিশ্বাস করতে পারছেন না। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার ছেলে জড়িত নয়, সে পরিস্থিতির শিকার।

তিনি আরও জানান, কোরবানির ঈদের পর ইফতি ক্যাম্পাসে যায়। এরপর আর বাড়িতে আসেনি। রাজবাড়ীতে পড়াশুনাকালীন তার মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল কিছু দেখেননি। এছাড়া কোনো রাজনৈতিক সংগঠন তো দূরের কথা, সে কোনো আড্ডাও যেত না। সব সময় সে পড়াশুনা নিয়ে থাকতো।

এক প্রশ্নের জবাবে ফকির মোশাররফ হোসেন বলেন, গত তিন মাস আগে ইফতি জানায় ক্যাম্পাসে সে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তখন আমি বলি- এসব ঝামেলার মধ্যে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এছাড়াও ইফতি শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।

ইফতির বাবা জানান, তিনি ছাত্র জীবনে বিএনপির রাজনীতি করতেন। কিন্তু এখন কোনো দলের রাজনীতি করেন না। তবে আবরার হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার চান তিনি।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমার ছেলে হত্যাকারী নয়, পরিস্থিতির শিকার।

রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদ্দুত কুমার দাস জানান, সকাল যখন এখানে পড়তো তখন থেকে তিনি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে আছেন। তাই তাকে ভালোভাবে চেনেন। সে ভালো ছেলে। তার মধ্যে কখনও খারাপ কিছু দেখেননি। কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে এমন কথাও শোনেননি ।

রাজবাড়ী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রব বিশ্বাস বলেন, ইফতি ও তার পরিবারের সবাইকে চিনি। বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ডে ইফতির জড়িত থাকার খবর জানার পর বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ এলাকায় যখন সে ছিল তখন ভদ্র ছেলে হিসেবে জানতাম। তাছাড়া সে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে জানা নেই।

এদিকে রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এরশাদ দাবি করেন, ইফতি মোশাররফ সকাল ছাত্রশিবির করতেন। তার বাবাও বিএনপির রাজনীতি করেন। ইফতি শিবির থেকে ক্রেস্টসহ অনেক কিছু পেয়েছেন।

রাজবাড়ী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, ইফতি মোশাররফ সকালের নামে রাজবাড়ী সদর থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই। এলাকাতেও তার বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের কোনো অভিযোগ পাইনি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে