আবরার হত্যা মামলার আসামি মোয়াজ গ্রেপ্তার

মত ও পথ রিপোর্ট

আবরার ফাহাদ
আবরার ফাহাদ। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় আরেক আসামি মোয়াজ আবু হুরায়রাকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আবরার হত্যা মামলায় বুয়েট শিক্ষার্থী মোয়াজ এজাহারভুক্ত আসামি।

শনিবার সকাল ১১টায় উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

universel cardiac hospital

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মোয়াজের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে। তিনি বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ১৭ ব্যাচের ছাত্র। হত্যার ঘটনায় তিনিও জড়িত ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

মোয়াজকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত ফাহাদ হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট ১৯ জনকে গ্রেফতার করল ডিবি।

প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।

তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।

হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলেট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।

এ ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় ১৪ জন জড়িত বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায়।

এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে তার বাবা চকবাজার থানায় সোমবার রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বুয়েট কর্তৃপক্ষ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। পাশাপাশি গঠন করেছে একটি তদন্ত কমিটিও।

এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় বুয়েট শাখার সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। তাকে মারধরের সময় ২০১১ নম্বর কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু।

শিক্ষার্থী, পুলিশ ও ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, শনিবার বাংলাদেশ-ভারতে হওয়া চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার। পরে সেটি শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্নার নজরে আসে।

তিনি একই হলের শিক্ষার্থী বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মেজবাউল ইসলাম জিয়ন এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকারকে বিষয়টি জানান।

এরপর সিদ্ধান্ত হয় আবরারকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করা হবে। সে অনুযায়ী শনিবার রাত ৮টার দিকে ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে আবরারকে ডেকে আনার নির্দেশ দেন বুয়েট ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল।

এ সময় তার সঙ্গে উল্লিখিত নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এরা সবাই ১৬ ও ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে দু’জন রোববার রাত ৮টার দিকে আবরারকে ডেকে ২০১১ নং কক্ষে নিয়ে যান।

সেখানে নেয়ার পর আবরারের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। তার ফেসবুক মেসেঞ্জার চেক করাসহ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আগে থেকেই ওই রুমে ক্রিকেটের স্টাম্প, হকিস্টিক, বাঁশের লাঠি, চাপাতি রাখা ছিল।

তা দিয়েই জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শুরু হয় মারধর। একপর্যায়ে আবরার অচেতন হয়ে পড়লে কোলে করে মুন্নার কক্ষে (২০০৫ নং) নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে দোতলা ও নিচতলার সিঁড়ির মধ্যবর্তী জায়গায় অচেতন আবরারকে নিয়ে যায় তারা।

যাতে শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা না যায় সে জন্য কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয় তার দেহ। এরপর হল প্রভোস্ট ও চিকিৎসককে খবর দেয়া হয়। চিকিৎসক এসে আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন। তখন কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়।

পুলিশ এসে আবরারকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে একটি তোশকের ওপর রাখে। এরপর তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আবরারকে পেটানো সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজের একটি অংশ সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

বুয়েট শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, আবরারকে জেরা ও পেটানোর সময় ওই কক্ষে সমাজসেবাবিষয়ক উপ-সম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশাররফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন।

ওই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফা আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পেটানোর পর আবরারের মৃত্যু হলে রাতে তারা সহপাঠীদের ডেকে লাশ নিচতলার সিঁড়ির সামনে রাখে।

এ ঘটনায় নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে