আবরার আধিপত্যবাদবিরোধী বীজ বপন করে গেছেন : বিএনপি

মত ও পথ প্রতিবেদক

বিএনপি আয়োজিত সমাবেশ
বিএনপি আয়োজিত সমাবেশ

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের রক্তে আধিপত্যবাদ ও সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে বীজ বপিত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। আবরারের এই রক্ত বৃথা যাবে না বলে মনে করে দলটি। দলটির নেতারা দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তির বিরোধিতা করায় আবরারকে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

আজ শনিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এতে বক্তব্য দেন।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসনে মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

কর্মসূচি পালন করতে ডিএমপির অনুমতির চেষ্টা করেও পায়নি বিএনপি। তবে অনুমতি ছাড়াই কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে কর্মসূচি পালন করে দলটি। কর্মসূচিকে ঘিরে নয়াপল্টন এলাকায় ছিল বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতি। সেখান থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

নির্ধারিত সময় বেলা দুইটার আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আসতে থাকেন। তারা সমাবেশস্থলে এসে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আবরার হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দেন।

সমাবেশে উপস্থিতদের একাংশ

সমাবেশে প্রধান অতিথি খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আবরার স্ট্যাটাস দিয়েছিল। এটা দেশের মানুষের প্রতিবাদ। মেধাবী ছাত্র বলেই সেটা করেছে। তার জন্য তাকে প্রাণ দিতে হলো। আবরারের কথা এই দেশের মানুষের কথা। আবরারকে হত্যা করে দেশের জনগণের কণ্ঠকে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র সমাজ এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তার রক্ত জনগণ বৃথা যেতে দেবে না।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না দাবি করে মোশাররফ বলেন, ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমে, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে, গণতন্ত্র মুক্ত হবে।

বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, শহীদ জেহাদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার পতনের বীজ বপিত হয়েছিল। তেমনি আবরারের রক্তের বিনিময়ে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বীজ বপিত হয়েছে।

ভারতের সঙ্গে চুক্তির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ফেনী নদীর পানি উত্তোলনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি দিয়েছেন, সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে সম্মতি দিয়েছেন, উপকূলে যৌথ নজরদারির নামে ভারতকে ২০টি রাডার প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দিয়েছেন। আমরা যে এলপিজি আমদানি করি তা ভারতে রপ্তানি করার অনুমতি দিয়েছেন। এই চুক্তির প্রতিটি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করেছিলেন গ্যাস না দেয়ার জন্য ২০০১ সালে তিনি ক্ষমতায় আসতে পারেননি। তাহলে এবার কি তার খেসারত দিলেন। আসলে শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে তিনি চুক্তি করে এসেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর  উদ্দেশ্যে মোশাররফ বলেন, ফেনী নদীর পানি উত্তোলনের অনুমতি দিলেন কিন্তু তা কতখানি তারা উত্তোলন করবে তা পরিমাপ করার বিষয়ে এই চুক্তিতে কিছু নেই। এছাড়া ৩৬টি পাইপ দিয়ে ইতিমধ্যেই ফেনী নদীর পানি ভারত জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

মোশাররফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সামান্য পানি-, কিন্তু এর ফলে ফেনী নদীর পাশের লোকজনের কৃষি কাজ ব্যহত হবে। মুহুরী প্রজেক্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনি বলছেন জাতীয় স্বার্থ ব্যাহত করেননি। সাবরুম শহরে তাহলে এতদিন তারা পানি পান করেছিল না? এটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে প্রতারণা করে ভারতকে সুবিধা দেয়ার জন্যই করেছেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে