আমরা ছাদবাগানে সবসময়ই মাটির বিকল্প হিসেবে এমন কিছু খুঁজে থাকি যা কিনা সহজে বহনযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও দ্রুত গাছ বেড়ে তুলতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র ছাদবাগানেই নয়, বাণিজ্যিক চাষের জন্যেও কোকোপিট মাটির উন্নত বিকল্প। শুকনো নারিকেলের আঁশ হলো কোকো পিটের মূল উপাদান।
নারিকেলের ফেলে দেওয়া বাদামি আঁশ সংগ্রহ করে মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়া করে বাণিজ্যিকভাবে কোকোপিট ব্লক তৈরি করা হয়। এতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকায় যেকোনো গাছ খুব সহজেই বেড়ে উঠতে পারে।
নারিকেলের ৩৫-৬৫% অংশই হলো এর আঁশ ও কয়ার এর অংশবিশেষ। নারিকেলের কয়ারের বাইরের আঁশযুক্ত অংশের বাইরে বহিঃত্বক থাকে। এই বহিঃত্বকের ভেতরের মধ্যত্বকে আঁশ থাকে। ফলের কাষ্ঠল অংশকে কয়ার বলা হয়। এর গুঁড়ো অংশকেও কোকোপিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত এক-তৃতীয়াংশ অংশই আঁশ, বাকি দুই-তৃতীয়াংশ অংশ কয়ার পিথ হিসেবে একটি নারিকেল থেকে সংগ্রহ করা হয়।
১৯৮০ সালে প্রথম নেদারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো কোকোপিটের ব্যবহার করে গোলাপ ও লিলিফুলের চাষ করা হয়। ফলাফল আশ্চর্যজনক হওয়ার পর বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই বাগান করতে কোকোপিটের ব্যবহার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও এর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের কৃষিপ্রেমীদের কথা চিন্তা করে উন্নত মানের কোকোপিট নিয়ে এসেছে ‘ডিএমআরই’ নামের কৃষি ভিত্তিক একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার জি এ টুটুল বলেন ছাদ বাগান এখন মোটামোটি সবাই করছে এবং খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বাগান করতে মাটি সংগ্রহ কষ্টসাধ্য কাজ। কেননা, ঢাকায় উর্ব্বর মাটি পাওয়াটা কঠিন। মাটির অন্যতম বিকল্প হিসেবে আমরা কোকোপিট বিক্রি ও বাজারজাত করছি।
জি এ টুটুল জানান, কোকোপিটে প্রচুর পরিমাণে গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান আছে। এতে রয়েছে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, উচ্চতর পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপাদান। কোকোপিটে দ্রুত পানি ও বাতাস চলাচল করতে পারে ফলে গাছের শিকড় দ্রুত বাড়ে। গাছের শিকড় বাড়ার কারণে গাছও দ্রুত বাড়ে এবং স্বাস্থ্যবান হয়।
কোকোপিটে দ্রুত পানি ও বাতাস আসা যাওয়ার কারণে ক্ষতিকারক ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। কোকোপিটে রাসায়নিক সার না মেশালেও চলে। শুধুমাত্র ভার্মিকম্পোষ্ট অথবা জৈব সার মিশিয়ে চাষ করা যায় ফলে রাসায়নিক মুক্ত সবজি, ফল, ফুল, অর্কিড ও অন্যান্য গাছ উৎপাদন করতে পারবেন।
কোকোপিটে আছে পানি ধরে রাখার অসাধারণ ক্ষমতা। ১ কেজি কোকোপিট ১৫ কেজির মতো পানি ধরে রাখতে পারে। বিভিন্ন ঋতুতে এর পরিমাণ বিভিন্ন হয়ে থাকে। একবার কোকোপিট ব্যবহার করলে পানি দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন পড়বে না।
কোকোপিটের আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা ৬০০-৮০০ ভাগ। গাছের জন্য যতটুকু পানি দরকার ঠিক ততটুকু পানি এই কোকোপিট ধারন করে রাখে ফলে গাছের শিকড়ে পঁচন ধরে না।
কোকো পিটে প্রাকৃতিকভাবে অপকারী ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস প্রতিরোধী উপাদান বিদ্যমান থাকে। কোকোপিটে প্রাকৃতিক মিনারেল থাকে যা উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি এবং উপকারী অণুজীব সক্রিয় করার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে। কোকোপিট দিয়ে গাছ লাগালে ক্ষতিকারক পোকা মাকড় আসে না।
অনলাইনে কোকোপিট কিনতে পারবেন এই ঠিকানায় www.dmrebd.com